‌ছেলেবেলার প্রাত্যহিকী ও বাবার দেওয়া একশো টাকা

স্মৃতিটুকু থাক
আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। বাবা রোজ সকালে উঠে রেডিওতে প্রাত্যহিকী শুনতেন। আমিও পড়ার ফাঁকে ফাঁকে শুনতাম। একের পর এক অসাধারণ চিঠি। সকালটা যেন সুন্দর হয়ে যেত। কী মনে হল, লুকিয়ে আমিও একটা চিঠি পাঠিয়ে দিলাম। সকাল হলেই রেডিওতে কান পেতে থাকতাম, কখন সেই চিঠি পড়া হবে। একের পর এক সকাল পেরিয়ে যেত। কিন্তু চিঠি আর পড়া হয় না।

radio

অন্য একটা বিষয়ের ওপর আবার লিখলাম। আবার সেই রেডিওতে কান পেতে থাকা। এদিকে, পড়ায় মনোযোগ নেই বলে বাবা মাঝে মাঝে ধমক দিচ্ছেন। একদিন হঠাৎ প্রাত্যহিকীর সঞ্চালক আমার নাম ঘোষণা করলেন। আমি আবেগে হাততালি দিয়ে উঠলাম। বাবা বুঝতে পারলেন কেন আমি রেডিওর সামনে বসে থাকতাম। বাবা খুব রাশভারী মানুষ। মন দিয়ে পুরো চিঠিটা শুনলেন। চিঠি শেষ হওয়ার পর আবার আমার নাম ঘোষণা হল। বাবার চোখের কোণে জল। কাঁপা কাঁপা গলায় বাবা বললেন, তুই এত ভাল লিখিস! আমিও কেঁদে ফেললাম। বাবা ঘরে গিয়ে একটা একশো টাকার নোট বের করে আনলেন। আমার পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। সেই একশো টাকাটা আজও ভাঙাইনি। সবসময় সঙ্গে থাকে, বাবার স্মৃতি হিসেবে।

শৈলেন মণ্ডল, পুরুলিয়া

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.