পূর্তমন্ত্রী কে, কজন জানেন?‌

স্বরূপ গোস্বামী

রাস্তা থেকে সরকারি অফিস, চায়ের দোকান থেকে পাড়ার ঠেক। যে কোনও জায়গায় একটা সমীক্ষা করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের পূর্তমন্ত্রী কে?‌ নির্ভুল উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। একশো জনের মধ্যে পাঁচজনও বলতে পারবেন কিনা সন্দেহ। মাঝেরহাট কাণ্ডের পর যদিও বা দু–‌একজন বলতে পারেন, মাঝেরহাট কাণ্ডের আগে একশো জনে একজন পারতেন কিনা সন্দেহ।

আসলে, এই দপ্তরটার কী কাজ, সাধারণ মানুষ বোধ হয় ভুলেই গিয়েছিল। এমনকী মন্ত্রী নিজেও বোধ হয় ভুলেই গিয়েছিলেন।

আচ্ছা বেশ, আরেকটা সমীক্ষা হয়ে যাক। অরূপ বিশ্বাস কোন দপ্তরের মন্ত্রী?‌ কেন তাঁকে চেনেন। নানারকম উত্তর আসবে। কেউ বলবেন ক্রীড়া মন্ত্রী। কেউ বলবেন, টালিগঞ্জের বিধায়ক। কেউ বলবেন, সুরুচি সংঘের কর্ণধার। কেউ বলবেন, সিরিয়াল আর্টিস্টদের নিয়ন্ত্রণ করেন। আরও কতরকম পরিচয় বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কজন তাঁকে পূর্তমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেবেন, ঘোর সন্দেহ আছে।

arup5

গত আড়াই বছরে বিভিন্ন বাংলা কাগজে অরূপ বিশ্বাসের খুব কম করে হলেও হাজারের ওপর ছবি ছাপা হয়েছে। নানা কারণে সেই ছবি। কোনওটা সিনেমা আর্টিস্টদের সঙ্গে, কোনওটা তৃণমূলের মিছিলে, কোনওটা খেলোয়াড়দের সঙ্গে। কিন্তু মনে করে দেখুন তো, পূর্তমন্ত্রী হিসেবে কখনও তাঁর ছবি দেখেছেন কিনা।

রাজ্যে কি নতুন রাস্তা হয়নি?‌ নতুন সেতু হয়নি?‌ নতুন ভবন হয়নি?‌ সবই হয়েছে?‌ কিন্তু বেচারা পূর্তমন্ত্রীর ডাক পড়েনি। শিলান্যাস থেকে উদ্বোধন, সব দিদিমণি একাই করেছেন। এমনকী ব্লকস্তরের বা পঞ্চায়েত স্তরের কাজও বাদ যায়নি। ফলে, পূর্তমন্ত্রী হিসেবে তিনি আড়ালেই থেকে গেছেন। কোন রাস্তা হবে, কত বরাদ্দ হবে, এসব সিদ্ধান্ত পূর্তদপ্তর কতটা নিয়েছে, ঘোর সন্দেহ আছে। এমনকী মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পরেও প্রেস কনফারেন্স থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোল, অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো থেকে নতুন প্রকল্প ঘোষণা— সবই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানেও পূর্তমন্ত্রীকে কার্যত ব্রাত্য করেই রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

arup2

এতদিনে রিপোর্টে বলা হচ্ছে, পূর্তদপ্তরই মূল দায়ী। কিন্তু এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরকে, সেই দপ্তরের মন্ত্রীকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে কে রেখেছেন?‌ সবই নাকি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হয়। তিনিই যেন মুশকিল আসান। তাঁর হাতেই সব সমাধানের চাবিকাঠি। এতে তাঁর নম্বর বাড়ে ঠিকই। কিন্তু মুদ্রার উল্টোদিকে আরও একটা ছবি। তাঁর প্রশাসন যে একেবারেই সাবালক নয়, নিজেকে জাহির করতে এই বার্তাটাও প্রতিদিন রেখে যাচ্ছেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.