সহজ কথাটা সহজে বলুন

অমিত ভট্টাচার্য

আরও একটা বন্‌ধ পেরিয়ে গেল। কেন জানি না, মনে হচ্ছে বামেরা আরও কিছুটা জনবিচ্ছিন্ন হল। যারা এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বামেদের সমর্থন করেন, তাঁদের মনেও আবার নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল। এভাবে যে মানুষের মনে জায়গা পাওয়া যায় না, এই সহজ বিষয়টাই আজও বাম নেতারা বুঝে উঠতে পারলেন না। সেই কারণেই বারবার মনে হয়, সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনা থেকে বাম নেতারা বোধ হয় অনেক দূরে বসবাস করছেন।
পঞ্চায়েতে প্রহসন হয়েছে, সবাই জানে। কিন্তু যদি ভোট হত, তাহলেই বা কী হত?‌ নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসত বিজেপি। সাম্প্রতিক বহু নির্বাচন, উপনির্বাচন থেকে এই প্রবণতা পরিষ্কার। বিজেপি–‌র ভোট বাড়ল কী করে?‌ অঙ্ক বলছে, বামেদের ভোট ব্যাপক হারে কমেছে। তবে, আমি বিশ্বাস করি, তৃণমূলের অনেক ভোটও গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে।
যাই হোক, আমার আলোচনার বিষয় অন্য। বিজেপি–‌র এই উত্থানের পেছনে তথাকথিত সেকুলার দলগুলিকেই দায়ী করব। কেউ সেকুলার হলে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু একপেশে হলেই মুশকিল। সেকুলারিজমের নাম করে যা চলেছে, তা হল সংখ্যালঘু তোষণ। তার ফলেই বিজেপি–‌র এই বাড়বাড়ন্ত। বিজেপি তো আর আকাশ থেকে পড়েনি। আজ যাঁরা বিজেপিতে ভোট দিলেন, তাঁদেরই একটা বিরাট অংশ এক সময় বাম শিবিরে ছিলেন। তাহলে সরে গেলেন কেন?‌ এই আত্মসমীক্ষাটা কি হয়েছে?‌
খুব পুরনো ঘটনা জানি না। তবে নব্বই সালের পর থেকে টুকটাক রাজনীতির খবর রাখি। আমি মোটেই সাম্প্রদায়িক নই। মিলেমিশে থাকার সংস্কৃতিতেই বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি, আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে মুসলিমরা সত্যিই অনেক পিছিয়ে আছেন। তাঁদের আরও উন্নয়ন দরকার, এই নিয়েও কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু সত্যিই কি তাঁদের উন্নয়নের আন্তরিক চেষ্টা হয়েছে?‌ তাঁদেরকে মানুষ হিসেবে ভাবা হয়নি, ভোটার হিসেবে ভাবা হয়েছে। প্রকৃত মুসলিমরা কী চায়, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। মৌলবাদীরা কী চায়, তা নিয়েই ভেবেছে এই দলগুলি। মুসলিমরা কোনও অপরাধ করলে সেটাকে আড়াল করা হয়েছে। এবং তার স্বপক্ষে যুক্তি সাজানো হয়েছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হয়েছে। আলিগড়ের কোন এক হিন্দু নেতা মমতা ব্যানার্জির মাথা কেটে নেওয়ার ফতোয়া জারি করেছে বলে এত হইচই। ইমাম বরকতি যখন মোদির মাথা কেটে আনার ফতোয়া জারি করেন, তখন তো তেমন প্রতিবাদ শোনা যায় না। ধুলাগড়ে যখন এমন নারকীয় ঘটনা ঘটছে, তার নিন্দাটুকু করতেও এত দ্বিধা কীসের?‌ সঠিক সময়ে যদি সঠিক প্রতিবাদটা করতেন, তাহলে আজ এভাবে বিচ্ছন্ন হতে হত না।

bandh4
তৃণমূল ত্বহা সিদ্দিকিদের কাছে ছুটে যায়, তার কারণ না হয় বোঝা যায়। কিন্তু বামেরাও কেন ফুরফুরা শরিফে ছুটে যায়?‌ সহজ কথা, মুসলিম তোষণ করতে গিয়ে মুসলিম ভোট তো আসেইনি, উল্টে হিন্দুদের বিশ্বাসযোগ্যতাও হারাতে হয়েছে। তারই সুযোগ নিয়েছে বিজেপি। তারা তো সুযোগ নেবেই। এমন উর্বর জমি, কেউ ছেড়ে দেয়!‌ ২০১৪ তে তারা ভোটে গিয়েছিল উন্নয়নের নামে। তেমন উন্নয়নের কাজ হয়নি। শিল্প আসেনি। কর্ম সংস্থান হয়নি। জিনিসপত্রের দাম কমেনি। কালো টাকা দেশে ফেরেনি। সারদা ধামাচাপা পড়েছে। বড় বড় প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই পূরণ হয়নি। তাহলে ওরা তো ধর্মের তাস খেলবেই। আপনারা তো সেটা খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই বামেদের কাছে অনুরোধ, সহজ কথাটা সহজভাবে বলুন। সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার ভূত মাথা থেকে তাড়ান। নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন। যেটা বলা দরকার, সেটাই বলুন। তাহলে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করতে হবে না।

আরেকটা অনুরোধ, বারবার বন্‌ধ ডেকে নিজেদের হাসির খোরাক করবেন না। এতে কারও কোনও উপকার হয় না। মানুষের বিরক্তি বাড়ে। এমনকী যে মানুষ তৃণমূল বা বিজেপি–‌র থেকে অনেক দূরে, তাঁরাও বামেদের কাছাকাছি আসতে ভরসা পায় না। নতুন সময়ের দাবি বুঝতে শিখুন। নইলে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *