স্পিকার পদের উচ্চতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন

ইন্দিরা দাশ
মাননীয় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় লন্ডনের মিডল টেম্পল থেকে বার অ্যাট ল পেয়েছিলেন। যোগ দেন কলকাতা হাইকোর্টে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে নিশ্চিত পেশাদারি ওকালতি ছেড়ে যোগ দেন সিপিএমে। জ্যোতি বসুর অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন। এবং প্রথমবার সাংসদ হন ১৯৭১ এ, বাবার কেন্দ্র বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্র থেকে।

somnath chattopadhyay1
এরপর ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ যাদবপুরে, এবং পরে ১৯৮৫ থেকে ২০০৯ বোলপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে ইউপিএ সরকার প্রতিষ্ঠা হলে তিনি স্পিকার মনোনীত হন। এবং সংসদের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এতে অত্যন্ত দুঃখ পান। কারণ, আগামী দিনে সংসদ তাঁর বাগ্মীতা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রবীণ সাংসদ ও তখনকার বিরোধী দলনেতা লালকৃষ্ণ আদবানি সেদিন বলেছিলেন, বোলপুরের সাংসদের বোল আর শুনতে পাওয়া যাবে না। স্পিকার হিসেবে তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন। কখনই পক্ষপাতদুষ্ট হননি। পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে যখন বামপন্থীরা ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নেন, তখন পার্টির পক্ষ থেকে তাঁর কাছে নির্দেশ আসে, স্পিকার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য। তিনি ইস্তফা দেননি। এবং পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন। প্রকাশ কারাতের নেতৃত্বে পার্টির পলিটব্যুরোর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দেশের আমজনতা থেকে শুরু করে পার্টির সাধারণ কর্মী–‌সমর্থকরা। ব্যতিক্রম ছিলেন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি সেদিন প্রকাশ কারাতের ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন।

somnath chattopadhyay3

সোমনাথবাবু স্পিকার পদের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্যই এই কাজ করেছিলেন। এটি ছিল একান্তই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। সেদিন স্পিকার পদের উচ্চতা তিনি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিস্বার্থে নয়, কারণ, একথা অনস্বীকার্য যে, তিনি প্রকাশ কারাতের থেকে কোনও অংশেই কম কমিউনিস্ট ছিলেন না। পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও কখনই পার্টির বিরুদ্ধাচরণ করেননি। বরং, পার্টির স্বার্থেই শেষমুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সব মানুষের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির প্রত্যেক সমর্থকও শোকাহত। সাংসদ হিসেবে তিনি হীরেণ মুখার্জি, ভূপেশ গুপ্তদের উত্তরাধিকার বহন করে গেছেন। তিনি সংসদে অসামান্য বক্তৃতায় মুগ্ধ করেছেন সংসদ এবং সারা দেশকে। কখনও কটূ কথা বলতেন না। ১৯৯৬ সালে তিনি পেয়েছিলেন আউটস্ট্যান্ডিং পার্লামেন্টারি অ্যাওয়ার্ড। তিনি বিশ্বাস করতেন, গণতন্ত্রে হিংসার কোনও জায়গা নেই। তাই আজ তাঁকে বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *