তিনি ফুল নিয়ে আসতে চান। কিন্তু কী রঙের ফুল দেবেন? লাল না সাদা? প্রাক্তন পার্টিকর্মীর মৃত্যুতে কীই বা বলা যায়! গিন্নির সঙ্গে একটু আলোচনা করে নিচ্ছেন। আর এই মোক্ষম মুহূর্তেই সেখানে পৌঁছে গেলেন রবি কর। শুনে ফেললেন দক্ষিণী দম্পতির কথোপকথন।
জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা,
মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল
দেবই তো! ফুল আমি দেবই। করেচি বহিষ্কৃত, তাই বলে কি ফুল দেব না হলে মৃত…
বিন্দে, বলি অ বিন্দে, কাপড় চোপড় গুচিয়ে দাও দিকিনি। দেকো আবার বেশি ভালো জামা কাপড় দিউনি। এমনিতেই আমি সাদা জামা সাদা পেন্টুল ছাড়া পরিনি, দেশের কল্যেনের কতা ভেবে ভেবে মাথার চুলগুলো অব্দি সাদা হয়ে গেচে, তবু দেকো বেশি ধপধপে সাদা জামা যেন না হয়। একটু পুরনো-পুরনো, ইস্তিরি না করা- দেকলেই যেন দুঃকি দুঃকি মনে হয়। ও হ্যাঁ, তুমিও শাড়ি বেলাউজ গুচিয়ে নাও। তোমাকেও তো যেতে হবে।
বলি ও বিন্দে, তুমি তো এত কিছু নেকাপড়া করোচ, এ মুকপোড়া পার্টিতে বিদ্যেয় আমার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এমন তুমি ছাড়া আর কেউ নি। তুমি একটু বই পত্তর ঘেঁটে বলো দিকনি কলকেতায় গে আমার কী বলা উচিত? পার্টির
নোক মরলে একরকমের কতা, অন্য পার্টির নোক মরলে আর একরকমের কতা- কোতায় কী বলতে হবে আমি জানি। কিন্তু ঘরশত্তুর বিভীষণ মরলে কী কতা বলতে হবে ঠাওর করতে পারচিনি।
সব থেকে ভালো হতো না গেলে। কিন্তু তোমার মুক চেয়েই এ বিষ আমাকে গিলতে হচ্চে। যতই হোক ওই কোলকাতার উজবুকগুলোই একদিন তোমাকে শুয়োরের খোঁয়াড়ে পাইঠেছিল। আর ওই ঘরশত্তুর বিভীষণটাও তাদেরই স্যাঙ্গাত। আজ এমন দিনে যদি সেকেনে না যাই, নোকে তো তোমাকেই বেইমান বলবে, বিন্দে। আমি জানি ওরা আমাকে দু’চোককে দেকতে পারেনে। তা না পারুক খেতি নেই। কিন্তু তোমাকে যদি বেইমান বলে, আমার মনে দাগা নাগবে না!
কী বললে, আমি ছবি তোলার নোভে যাচচি? তা অবস্যি ভুল বলনি। ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার বাসনা আমার কবেকার ইছচে। যদি রাশিয়ায়, নাতিন আমেরিকায় জন্মাতুম, তবে এতদিনে নাল ঝাণ্ডা মাতায় নে দশ দিনে দুনিয়া কাঁপকে দিতুম। এই পোড়া দেশে আমার মুল্য তুমি ছাড়া কেউ বুঝলুনি। তাই পরমাণু-টরমানু নীতিকথা আউরে এমন প্যাঁচাল পাকালুম যে পার্টীটা উটে যায় যায়। একবার যদি তুলে দিতে পারি বিন্দে, তাহলে ইতিহাসে অমর হওয়া কে ঠেকায়? “বাম সাম্রাজ্য পতনের কারণ নেকো।“ এই প্রশ্নের উত্তরে আমার অবদান উল্লেখ করতেই হবে।
কিন্তু আমার এই ইচচেয় বাগড়ায় দিতে এসেছিল কে? এই সদ্য পটলতোলা নোকটা। সবাই আমার বাণী মেনে নিয়ে সমর্থন তুলে নিল। শুধু এই নোকটা মাতা নিচু করলুনি। কিচুতেই করলুনি। পার্টি থেকে ক্যাঁৎ করে নাতি মেরে তাড়গে দিলুম। ভাবলুম এবার আমার নামে অকথা-কুকথা বলবে, তকন বলব নোকটা শ্রেণিশত্তুর। ওমা এমনই ভদ্দরনোক যে, বের করে দেওয়ার পরেও পার্টির বিরুদ্ধে একটা কথা বললুনি।
একে নে কী করা যায় বল তো বিন্দে! মরে গেল, ঘাড় থেকে একটা আপদ নামল। একন পেরাক্তন পার্টি কর্মীর মিত্তু নিয়ে অজনি পাম দত্ত অথবা হ্যারল্ড ন্যাস্কি কী নিকেছে, তা নিয়ে একটু চোতাপত্তর খুলে নেকা পড়া করলেই হয়।
কিন্তু ওই যে ছবি! আজকের দিনে একবার মালা দিতে পারলেই কাল কলকেতার সব কাগজে ছবি বেরবেই। অন্য কারোর ছবি না বেরুক আমারটা বেরবেই। বলি অ বিন্দে কী রঙের ফুল দেব বল তো? নাল না সাদা?