অজয় কুমার
একটি ঘটনা বাঁকুড়ার খাতড়ায়। অন্যটি নদিয়ার চাকদায়। দুটি ক্ষেত্রেই ঘটনা কিছুটা একই রকম। খাতড়ায় দিলীপ ঘোষের গাড়িতে আক্রমণ চালানো হল। চাকদায় ভাঙচুর হল আরেক বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যর গাড়ি।
দুটি ক্ষেত্রেই জনরোষের তত্ত্ব সামনে আনা হল। স্থানীয় মানুষ নাকি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা নাকি এমনটা করে থাকতে পারেন। এর সঙ্গে নাকি তৃণমূলের সম্পর্ক নেই।জঙ্গি সংগঠনগুলো একের পর এক নাশকতা ঘটায়। অবশ্যই নিন্দনীয় এবং ঘৃণ্য। কিন্তু একটা ব্যাপারে অন্তত তাদের তারিফ করতে হয়। তারা অন্তত অপকর্মের দায়স্বীকার করে।
দুটি ক্ষেত্রেই গাড়ি ভাঙচুর করা হল। কিন্তু শারীরিক হেনস্থা করা হল না। অর্থাৎ, একটু ভয় দেখাও, গাড়িতে ঢিল ছোঁড়ো। কিন্তু গায়ে হাত তুলো না। দুটি ঘটনা কি একেবারেই বিচ্ছিন্ন? একটার সঙ্গে আরেকটার কোনও যোগ নেই? ফেলু মিত্তির বা ব্যোমকেশ হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এটুকু বোঝা যাচ্ছে, দুটি ভিন্ন জেলার ঘটনা হলেও কোথাও একটা কমন যোগসূত্র আছে। কোথাও একটা ‘অদৃশ্য অনুপ্রেরণা’ কাজ করে থাকতেই পারে।
শাসকের হাতে কেউ আক্রান্ত হলেই জনরোষের তত্ত্ব সামনে আসছে। এই জনরোষ যদি সত্যিই একদিন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসে! দিলীপ ঘোষ তবু মাঝে মাঝে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন। তাঁর প্রতি রাগের তবু কারণ থাকতে পারে। কিন্তু শমীক ভট্টাচার্য! এই রাজ্যে হাতে গোনা যে কয়েকজন মার্জিত ভাষায় বিরোধীতা করতে জানেন, শমীক তাঁদের মধ্যে সামনের সারিতে। তাঁর প্রতি কারও রাগ থাকতে পারে? এমনকী যদি কেউ সত্যিই তৃণমূল কর্মী হোন, তাঁরও রোষ থাকার কথা নয়। তাহলে, কারা এই ঢিল ছোঁড়ার নির্দেশ দিলেন? কারা নেতৃত্বের কাছে ‘নম্বর বাড়াতে’ চাইলেন?
যারা ঢিল ছুঁড়েছে, তাদের নিশ্চয় আশ্বস্ত করা হয়েছে, পুলিস কিছু করবে না। অন্য ক্ষেত্রে নেতাদের বিশ্বাস না করলেও অন্তত এই একটা ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায়, সেটা কর্মীরা বুঝেছেন। তাই ঢিল ছুড়তে সাহস পেয়েছেন। আর পুলিসও জানে, কারা ঢিল ছুঁড়েছে। এটাও জানে, তাদের ধরা চলবে না।
অভিনন্দন শমীক ভট্টাচার্যকে। তিনি থানায় যাননি। পুলিসের কাছে অভিযোগও করেননি। জানিয়েছেন, কী হবে অভিযোগ করে? পুলিস যে কিছুই করবে না, এ তো জানা কথা। নিজে আক্রান্ত হয়েও পুলিসের প্রতি যে আন্তরিক অনাস্থা তিনি দেখিয়েছেন, এটাই হল আসল অনাস্থা। তাঁবেদারি করতে করতে পুলিস এই অনাস্থা অর্জন করেছে।
শমীক যে প্রতিবাদের বার্তা তুলে ধরলেন, এটাও একটা জোরালো প্রতিবাদ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। যা অনেক হুঙ্কারের থেকেও বেশি কার্যকরী। এই জন্যই শমীক ভট্টাচার্যরা অন্যরকম। এই জন্যই এত আগাছার ভিড়েও তাঁদের আলাদা করে চেনা যায়।