ধীমান সাহা
একুশে কী বার্তা দেবেন, তা নিয়ে কদিন ধরেই মিডিয়ার যেন ঘুম ছিল না। কী আর নতুন বার্তা দিতেন? প্রতিবার একুশে জুলাই যা বলা হয়, তার থেকে আলাদা কীই বা বলতেন?
বিজেপি খুব খারাপ, তাদের হারাতে হবে, দিল্লি দখল করতে হবে। এই রাজ্যে বাম আর কংগ্রেস বিজেপি–কে মদত দিচ্ছে। সিপিএম কোনও কাজ করেনি, এত এত দেনা করে গেছে। এই তো। প্রতিবার বলেন, এবারও বললেন। নতুন কথা কী?
তবে ইদানীং প্রশাসনিক সভায় তিনি মাঝে মাঝে সিন্ডিকেট নিয়ে বলছিলেন। ছাত্রদেরও বেশ কয়েকবার কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম, একুশোর মঞ্চ থেকে দলের ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার কথা বলবেন। তেমন কিছু পেলাম না। সিন্ডিকেট নিয়ে কোনও কথা শোনা গেল না। জেলায় জেলায় দুর্নীতি বা ঔদ্ধত্য নিয়ে কোনও সতর্কবার্তা নেই। যেভাবে কলেজে ভর্তিকে ঘিরে টাকার খেলা চলেছে, তা নিয়েও কোনও হুঙ্কার নেই। আর পঞ্চায়েতে যেভাবে সন্ত্রাস চালানো হয়েছে, তা নিয়েও ঘুরিয়ে কোনও কড়া ধমক নেই।
বরং, সন্ত্রাসকে একরকম বৈধতাই দিয়ে গেলেন। বুঝিয়ে দিলেন, সন্ত্রাস হল স্থানীয় বাধ্যবাধকতা। বিনা লড়াইয়ে এক তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জিতেছে শাসকদল। এটা তাঁর কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক এক ঘটনা। তুলনা টানলেন কিনা উত্তরাখণ্ড আর সিকিমের সঙ্গে। সেখানে বিনা লড়াইয়ে ফয়সালা হয়, তাই এখানেও হলে ক্ষতি কী, যুক্তিটা মোটামুটি এইরকম।
ভাবা যায়, একজন শাসক এরকম যুক্তি দিচ্ছেন! অথচ, বামেদের সময় এসব নিয়ে তিনি কত সোচ্চার হতেন! কথায় কথায় রাষ্ট্রপতি শাসন চাইতেন। আর এখনকার এই সীমাহীন সন্ত্রাস নাকি স্থানীয় বাধ্যবাধকতা। তাঁর নাকি কিছুই করার নেই। হয় সন্ত্রাস থামানোর ব্যাপারে তাঁর কোনও সদিচ্ছা নেই। অথবা, নিজের গুন্ডাবাহিনীর কাছে সত্যিই তিনি নিজেই অসহায়।
সন্ত্রাস কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এই বাংলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই চলেছে চূড়ান্ত সন্ত্রাস। এমন একটি ব্লকও নেই, যেখানে বুথদখল হয়নি। এবং পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিডিও, এসডিও কার্যত মদত দিয়ে গেছেন এই বুথ দখলে। তারপরেও তাঁর কাছে এটা কোনও ঘটনাই নয়। এটা নাকি নিছকই স্থানীয় বাধ্যবাধকতা। সেই তিনি যদি ৪২ এ ৪২ এর বার্তা দেন, তাহলে কোন পথে সেই বার্তা দিচ্ছেন, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তার মানে কি লোকসভা ভোটেও একই ট্রাডিশন! কী জানি, সেটাই হয়ত একুশের বার্তা। কর্মীরা সম্ভবত এই বার্তা নিয়েই ফিরে গেলেন।