খরচ কমাতে গেলে ছবি ছাপা কমাতে হবে

ধীমান সাহা

হঠাৎ করে যেন রাজ্য সরকারের টনক নড়েছে। খরচ কমাতে হবে। নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। জনগণের করের টাকায় বিলাসিতা হওয়াটা গণতন্ত্রে কাম্যও নয়। কিন্তু খরচ কোথায় হচ্ছে, এবং কোথায় কতটা কাটছাঁট করতে হবে, সে ব্যাপারে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কমাতে হবে। অতএব, লোকদেখানো কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। রায়গঞ্জে দেখা গেল, ডিএম গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে অফিসে আসছেন। কোথাও সরকারি মিটিংয়ে খাবারের মেনুতে নিরামিষ। আপাতত এসব লোকদেখানো কর্মকাণ্ড চলবে। কোনও মন্ত্রী হয়ত দেখা যাবে সাইকেলে চড়ে অফিস আসছেন। কোনও বিধায়ক পায়ে হেঁটে সফর করছেন।

hoarding

কোথায় কোথায় অপচয়, কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে নাকি কমিটি হয়েছে। সেই কমিটির মাথা করা হয়েছে মুখ্যসচিবকে। তাঁর ঘাড়ে কটা মাথা যে তিনি আসল অপচয়ের দিকে আলো ফেলবেন!‌ একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গত কয়েক বছরে মনে হয়েছে, সবথেকে বেশি অপচয় হয় মুখ্যমন্ত্রী ছবি ছাপতে গিয়ে। বছরের অধিকাংশ দিন সংবাদপত্রে পাতাজোড়া তাঁর বিজ্ঞাপন। সরকারি প্রকল্প গৌণ, তাঁর ছবিটাই মুখ্য। টিভিতে, রেডিওতেও তাঁর ছবি ও প্রচারের বিরাম নেই। আর রাস্তার হোর্ডিং তো মারাত্মক চেহারা নিয়েছে। প্রকল্পের খরচ যত, প্রচারের খরচ তার থেকে ঢের বেশি। আর সরকারি প্রকল্পের প্রচার মানে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর ছবি।

kanyasree

শুধুমাত্র ছবি ছাপতে কত খরচ হয়েছে?‌ তার কোনও হিসেব পাওয়া যাবে?‌ অন্তত সরকার বিধানসভায় এই জাতীয় কোনও তথ্য তুলে ধরেনি। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বাবদ কত খরচ হয়েছে, তার তালিকা আজও বিধানসভায় প্রকাশ করা হয়নি। সরকারি হোর্ডিংয়ে কত খরচ?‌ কেউ জানে না। গত বছর কলকাতায় যুব বিশ্বকাপ হয়ে গেল। সেখানে হোর্ডিংয়ে হোর্ডিংয়ে তাঁর ঢাউস ঢাউস ছবি। স্টেডিয়াম সাজাতে যত না খরচ হয়েছে, তাঁর ছবির প্রচারের খরচ বোধ হয় তাকেও ছাপিয়ে গেছে। বিভিন্ন পুরসভাকেও এইসব হোর্ডিং লাগাতে হয়েছে। নইলে, কবে কার চাকরি যাবে, কে জানে!‌ সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ। ছবিতে ছবিতে ছয়লাপ। যেন তাঁর ছবি রাস্তায় টাঙানো থাকলেই কেউ আর বেপরোয়া গাড়ি চালাবে না, কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে না। আর কন্যাশ্রী যখন স্বীকৃতি পেল, তখন আর পায় কে!‌ কত হাজার হোর্ডিং যে রাস্তাজুড়ে টাঙানো হল, কে জানে!‌ সরকারি নানা দপ্তরকে, বিভিন্ন পুরসভাকে নিজেদের বাজেট থেকে সেইসব হোর্ডিং টাঙাতে হল। বইমেলা থেকে শিল্প সম্মেলন, প্রশাসনিক সভা থেকে পুজো বা ঈদের শুভেচ্ছা।বিজ্ঞাপন আর হোর্ডিংয়ে শুধু মুখ নয়, গোটা শহরটাই  যেন ঢেকে যায়। এই ছবি লাগানোর অঙ্কটা কত?‌ কয়েক হাজার কোটি তো হবেই। তাঁর মহিমার প্রচার হয়েছে। বিজ্ঞাপনের লোভ দেখিয়ে (‌বা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে)‌ কাগজগুলোকে বাগে আনা গেছে ঠিকই, কিন্তু এতে আমজনতার কী লাভ হয়েছে?‌

এমন অপচয় নিয়ে মুখ্যসচিব একটি বাক্যও লিখতে পারবেন?‌ এমন মহার্ঘ্য অপচয় কমানো দরকার, কোনও মন্ত্রী বা কোনও নেতা বলতে পারবেন?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.