সন্দীপ লায়েক
————————–
জীবনে একটিবারই পুরী গেছি, তাও সে একযুগ আগে। আমি তখন ক্লাস ফোর। বাবা-মা-বড়মামা-পুঁচকে ভাই ও ছোট্ট আমি। এই ছিল আমাদের টিম।
এদ্দিন পর ওই ছোটবেলার কটা কথা আর মনে পড়ে? তবু কিছু কিছু ঠিক মনে গেঁথে যায় সারা জীবনের জন্য। যেমন এই পুরি, অর্থাৎ লুচির দাম! সেই গল্পটাই বলছি..
বেহরামপুরে মাসির কোয়ার্টারে দিন পাঁচ কাটিয়ে সবাই মিলে বালুগাঁও এলাম। উপলক্ষ চিল্কা। বালুগাঁওয়ে নেমে প্রথমেই যেটা চোখে পড়েছিল, সেটা হল ঝুড়িতে করে বিক্রি হচ্ছে চকচকে কাঁকড়া। ভাবতেই কষ্ট হল, সেগুলোও নাকি লোকে খায়! মিষ্টির দোকানে ঢুকে অর্ডার হল রসগোল্লা। একপিস দশ টাকা। সাইজ দেখে আমার ভিরমি খাওয়ার উপক্রম। আমি অবশ্য সেটাকে পেটে ফেলিনি, অন্য কী একটা খেয়েছিলাম। যদিও ভাই সেটাকে তারিয়ে তারিয়ে খেল। আসলে আমি যেটা খেতাম না, সেটাই সে তৃপ্তি করে খেত তখন!
চিল্কায় গেলে সবারই কেমন একটা নাবিক নাবিক ভাব আসে। কিনে ফেলে হ্যাট, বাইনোকুলার। প্রচন্ড গোঁ ধরে আমরা অবশ্য শুধু বাইনোকুলারটাই কিনেছিলাম। চোখের সমস্যা ছিল কিনা জানি না, তবে বেশ মনে পড়ে, বাইনোকুলারের চেয়ে খালিচোখে দূরের জিনিস বেশি স্পষ্ট দেখা যেত!
লঞ্চে চল্লিশ মিনিট, হাত নামালেই ছোঁয়া যায় জল। শেষে দ্বীপের মধ্যে অপূর্ব কালিজাই মন্দির। মন্দির দেখে মাসিদের ছেড়ে আমাদের টিম ফিরে এসেছিল পুরীতে। পুরীর হোটেলটা ছিল সৈকত থেকে হেঁটে মিনিট দশেক। হোটেলের প্রতিদিনের রেন্ট ছিল চল্লিশ–পঞ্চাশ টাকার মতো। মাটিতেই ছিল শোয়ার ব্যবস্থা। ছিল একটা টেবিল ফ্যান। যেটা ঘড়ঘড় শব্দ করে আপ্রাণ ঘুরত।
আমাদের গ্রামে তখনও ইলেক্ট্রিসিটি পৌঁছায়নি, তাই ফ্যানের হাওয়া শুনেই বুঝি গরমটা কমে গিয়েছিল। দিব্যি ঘুমিয়েছিলাম সকলে। রাত অল্প বাড়লে বাবা ও বড়মামা রাত্রের খাবার সন্ধানে বেরিয়ে গেলেন। আমি আবদার করলাম লুচি খাব। ভাইও তালে তাল মেলাল (লোভ হলে লুচিটাই সেরা অপশন ছিল তখন!)।
ঘরময় পায়চারি করছি। মুখে জল আসছে–এই লুচি এল বলে! অবশেষে বাবা -বড়মামা ফিরে এল। খাবারের ঠোঙা খোলা হল। বেরিয়ে এল রুটি আর আলুর তরকারি! মনটা অবশ্য খারাপ হতে হতে হল না। কারণ, অন্য একটা প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এসেছিল লাল বোঁদে!
মামা পরে বুঝিয়ে বলেছিল, লুচি খেলে পেট খারাপ করবে। তাছাড়া এত দামে কি লুচি খাওয়া যায় নাকি? মস্ত মস্ত রুটি কুড়ি পয়সা, অথচ ওই ছোট ছোট লুচি গুলো কিনা পঁচিশ পয়সা?