বাইক নিয়ে আজগুবি ফতোয়া ফিরিয়ে নিন

অজয় কুমার

অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু নিয়ম চালু হয়ে যাচ্ছে। চালু করার আগে ভাবনা চিন্তার ছাপ থাকছে না। নিজেদের অভিজ্ঞতা নেই, এটা পরিষ্কার। যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের জিজ্ডেস করলেও পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
কাগজে দেখলাম, এবার থেকে বাইক কিনতে গেলে নাকি আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে হবে।

কার মাথা থেকে এই বুদ্ধি বের হল, কে জানে!‌ এই নিয়মের পেছনে কী যুক্তি, তাও পরিষ্কার নয়। বলা হচ্ছে, এতে নাকি দুর্ঘটনা কমবে। দুর্ঘটনায় বছরে কতজন মারা যাচ্ছেন, তার পরিসংখ্যান আছে!‌ একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন তো, এই দুর্ঘটনার কারণ কী?‌ কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে বাইক চালকের তেমন দোষ নেই। উল্টো দিক থেকে আসা ভারী গাড়ির দোষে ঘটেছে। কিন্তু বাকি কারণগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

১)‌ যতজনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়, তাদের কজনের লাইসেন্স আছে, কজন লাইসেন্স–‌বিহীন?‌ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বেশির ভাগেরই কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। লাইসেন্স বিহীন, এমন মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। দশ শতাংশও হবে কিনা সন্দেহ। রাস্তায় যাদের বেপরোয়া গাড়ি চালাতে দেখি, তাদের অধিকাংশেরই লাইসেন্স আছে। বরং যার লাইসেন্স নেই, সে অনেকটা সংযত থাকবে। কারণ, তাকে নানা জায়গায় ফাইন দিতে হতে পারে।

২)‌ একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন তো, বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে যতজনের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে কতজন মদ্যপান করে থাকেন?‌ রাতের দিকের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মদ্যপান প্রায় অনিবার্য কারণ। অথচ, এটাকে আটকানোর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। যদি মদ্যপান করে বাইক চালালে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হত, অনেকেই মদ খেয়ে বেরোনোর আগে দু’‌বার ভাবতেন। রাস্তায় র‌্যান্ডম চেকিং করাই যায়। কিন্তু সরকার আবার মদ্যপান বাড়ানোয় উৎসাহী। মদ থেকে আরও রেভিনিউ তোলায় উৎসাহী। তাহলে দুর্ঘটনা কমবে কী করে?‌

bike

৩)‌ ধরা যাক, আমি বাইক চালাতে জানি না। বা একটু আধটু জানলেও তেমন ভাল জানি না। তাই বলে আমার বাইক কেনার অধিকার নেই? আমি কার কাছে শিখব?‌ বন্ধুরা কেন আমাকে বাইক দেবে?‌ আমিই বা বারবার চাইব কেন? আমার তো মনে হতেই পারি, লোকের গাড়ি চালাব না, নিজের গাড়ি কিনে শিখে নেব।

৪)‌ চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে তবু না হয় ড্রাইভিং স্কুল আছে। আগে ড্রাইভিং শিখে, তারপর কেনা যেতে পারে। কিন্তু বাইকের ক্ষেত্রে সেই ড্রাইভিং স্কুল কোথায়?‌ তাহলে আমি কোথায় গিয়ে বাইক শিখব?‌

৫)‌ সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে, এবার হয়ত এমন বাইক স্কুল গজিয়ে উঠবে। মোটা টাকার বিনিময়ে তারা লাইসেন্সও করিয়ে দেবে। তারপর সেই লাইসেন্স দেখিয়ে বাইক কেনার আবেদন। অনেকে না শিখিয়েই লাইসেন্স দিয়ে দেবে। আরও কত চক্র গড়ে উঠবে, কে জানে!‌

মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া এত লক্ষ লক্ষ হোর্ডিং টাঙিয়েও দুর্ঘটনা কমল না! দুর্ঘটনা যদি কমাতেই হয়, আগে মদ খেয়ে বাইক চালানো বন্ধ করুন। দেখবেন, প্রায় সত্তর ভাগ দুর্ঘটনা কমে গেছে। সেই সদিচ্ছা কি সরকারের আছে?‌ ‌ ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.