রক্তিম মিত্র
নেতাজি ইনডোরের সভাকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই নানা চর্চা চলছিল। নেত্রী কী বার্তা দেবেন, কাকে কড়া ধমক দেবেন, এমন জল্পনাও চলছিল। এই বিশ্বকাপের বাজারেও অনেক কাগজে প্রথম পাতাতেই উঠে এল নেত্রীর অমৃতবাণী। নানা দৃষ্টিকোণ। কোথাও বলছেন, চাঁদা তুললে দলকে দিতে হবে ৭৫ ভাগ। কোথাও বলছেন, এত ঝগড়া কেন, দুজনকেই বের করে দেব?
একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন যুবদের নিয়ে। তৃণমূল যুব কংগ্রেস আসল তৃণমূল কংগ্রেসকে পাত্তা দিচ্ছে না। সমান্তরাল কর্মসূচি নিচ্ছে। নানা জেলা থেকেই এমন অভিযোগ আসছিল। পঞ্চায়েতে নানা জায়গায় যুব তৃণমূলের নামে অফিসিয়াল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থীও দেওয়া হয়েছিল। যুব–র সভাপতি হয়ত দলের জেলা সভাপতিকেই পাত্তা দিচ্ছেন না।
তিনি কড়া ধমক দিলেন, আমি যুব আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। আমাকে শেখাবেন না। যুব–রা যেন নিজেদের দলের থেকে বড় না মনে করে। দলের নিয়ম মেনেই তাদের চলতে হবে। জেলায় জেলায় দলের নেতাদের কথা শুনেই তাদের চলতে হবে।
যুবদের এত বাড়বাড়ন্তের আড়ালে কে আছেন, সেটা অবশ্য তিনি ভেঙে বলেননি। বলার দরকারও নেই। মনে পড়ে যাচ্ছে নব্বই দশকের কথা। তিনি তখন রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। টানা সাত–আট বছর প্রদেশ কংগ্রেস বনাম যুব কংগ্রেসের লড়াই চলেছে। প্রায় মুখ দেখাদেখিও ছিল না। সকালে প্রদেশের কর্মসূচি, তো বিকেলেই যুব কংগ্রেসের পাল্টা কর্মসূচি। এরা ধর্মতলায়, তো ওরা হাজরা মোড়ে। বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, এই রেশারেশিই ছিল রোজকার শিরোনাম। প্রদেশের সভায় মমতা বা তাঁর অনুগামীরা যেতেন না। আবার যুবর সভায় প্রদেশে নেতৃত্বকেও দেখা যেত না। এঁরা দিল্লিতে দরবার করছেন, তো পরের দিনই ওঁরাও চলে যাচ্ছেন। শ্যাম রাখি না কূল রাখি, এমনই দিশাহীন অবস্থা হয়েছিল হাইকমান্ডের। শুধু কলকাতায় নয়, সোমেন পন্থী বনাম মমতা পন্থীর এই আড়াআড়ি বিভাজন ছড়িয়ে গিয়েছিল বাংলার প্রতিটি জেলাতেই।
সেই দিনগুলোর কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে। যখন তিনি নিজে যুব সভানেত্রী হয়ে রোজ নিয়ম করে গাল পাড়ছেন প্রদেশ নেতৃত্বকে। সেই সময় যে কোনও কাগজের ফাইল খুলুন, তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সেই সময় মমতা ব্যানার্জির লেখা বইগুলো পড়ুন। তাহলেও পেয়ে যাবেন। প্রদেশ নেতৃত্বকে কীভাবে নিয়ম করে আক্রমণ করতেন, তাঁর বইয়েই এমন অনেক মণিমুক্ত ছড়ানো আছে।
সেই তিনি, আজ বলছেন, যুবরা যেন দলের কথা শুনে চলে। তিনিই অনুপ্রেরণা। তিনিই পথ দেখিয়েছেন, মূল সংগঠনকে কীভাবে রোজ অপদস্থ করতে হয়। এই প্রজন্ম হয়ত সেই ইতিহাস জানে না। না জেনেই তাঁরা অনুপ্রেরণা নিয়ে বসে আছে।
ইতিহাস এভাবেই ফিরে ফিরে আসে।