ধীমান সাহা
হতাশায় মানুষ কতকিছুই না করে! রাহুল সিনহাকে দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে। আগে ছিলেন রাজ্য সভাপতি। এখন নেই। রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে। এক, দিলীপ ঘোষ। দুই, মুকুল রায়। সবমিলিয়ে রাহুল সিনহার টিআরপি এখন লকেট–সায়ন্তনদের থেকেও পেছনে।
তিনি শুরু করেছেন জনসংযোগ যাত্রা। একেকদিন একেকজন বিশিষ্ট লোকের বাড়ি যাচ্ছেন। তাঁর হাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের বই তুলে দিচ্ছেন। মনের সুখে ছবি তুলছেন। রিপোর্টার নিয়ে যাচ্ছেন। বেরিয়ে এসে ভাষণ দিচ্ছেন। রিপোর্টার না এলে নিজেই হোয়াটসঅ্যাপ করে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
কোনওদিন যাচ্ছেন দীনেশ বাজপেয়ীর বাড়ি, কোনওদিন যাচ্ছেন শ্যামল সেনের বাড়ি। এবার ছুটলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। সঙ্গে অবশ্য আগাম খবর দিয়ে টিভির লোক, কাগজের লোক নিয়ে যাচ্ছেন। সবাই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছে সেই সেলিব্রিটির বাড়িতে। হাতে বই তুলে দিচ্ছেন, এমন ছবিও কোনও কোনও কাগজে ছাপা হচ্ছে।
বিজেপি–র পক্ষ থেকে তিনি বিশিষ্টদের বাড়িতে যেতেই পারেন। তাঁদের মতামত চাইতেই পারেন। কিন্তু এত লোকজন নিয়ে যাওয়ার কী আছে? তার জন্য টিভির লোক নিয়ে যেতেই হবে? রাহুল সিনহা এমন কোনও ভিআইপি নন যে তাঁর পিছু পিছু মিডিয়া ধাওয়া করবে। সৌরভ গাঙ্গুলিও অধিকাংশ দিন একা একাই সিএবি–তে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী যখন বাড়ি থেকে নবান্নে আসেন, অধিকাংশ দিন সঙ্গে মিডিয়া থাকে না। প্রসেনজিৎ বা দেবকেও সারাক্ষণ মিডিয়া ধাওয়া করে না।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তিনি কেন গিয়েছিলেন? ভাল করেই জানেন, বিজেপি সম্পর্কে তাঁর মনোভাব কী। হাজার চেষ্টা করেও তৃণমূল কাছে টানতে পারেনি। বিজেপিও পারবে না। অল্প কথায় যা বোঝানোর, বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, নোটবন্দীর সময় গোটা সমস্যা হয়েছিল। পরামর্শ চাইলেন রাহুল। বিনীতভাবে সৌমিত্র জানালেন, নিজের কাজেই এত ব্যস্ত থাকি, অন্যের কাজে কী পরামর্শ দেব!
প্রথম কথা, রাহুল সিনহা সরকারের কেউ নন। তিনি সরকারি সাফল্যের বই তুলে দেওয়ারই বা কে? যদি কোনও বিশিষ্ট লোকের কোনও পরামর্শ থাকেও, তাঁরা খামোখা রাহুল সিনহাকে বলতে যাবেন কেন? তাহলে, রাহুল গেলেন কেন? স্রেফ ছবি তুলতে। এই সহজ সত্যিটা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বোঝেন। বোঝেন বলেই সৌজন্যের মোড়কে উপেক্ষা ফিরিয়ে দিলেন।
কিন্তু কোনটা সমাদর, কোনটা উপেক্ষা, সেটা কি রাহুল সিনহারা বোঝেন!

