স্বরূপ গোস্বামী
মহেশতলায় কে জয়ী, এটা আর কোনও প্রশ্ন নয়। ব্যবধান যে ষাট হাজারের ওপর, এটাও এতক্ষণে সবাই জেনে ফেলেছেন। দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি, তৃতীয় স্থানে বাম, এই বার্তাও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
একবার ভেবে দেখুন তো, এই মার্জিন কত হতে পারত। দুলাল দাস যদি সর্বশক্তি প্রয়োগ করতেন, লাখ ছাপিয়ে যেত। তিনি যদি পাড়ায় পাড়ায় উন্নয়ন বাহিনী দাঁড় করিয়ে রাখতেন, বিরোধীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যেত।
কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত হিংসা বা বুথ দখল হয়নি, এমন নয়। কিন্তু সেটা তেমন বড় সংখ্যায় নয়। মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ভোটই হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীও যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে।
এটাকে এই মুহূর্তে মহেশতলার মোটামুটি সঠিক জনমত বলে ধরে নেওয়াই যায়। কেন বিজেপি বাড়ল, কেন বামেরা তৃতীয় হল, ধর্মীয় মেরুকরণ হল কিনা, তা নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু দুলাল দাস মানুষের রায়ে নির্বাচিত, এটা মানতে কোনও দ্বিধা থাকার কথা নয়।
জয়ের কারণ কী? ১) তৃণমূলের সংগঠন ২) দুলাল দাসের নিজস্ব ক্যারিশ্মা। ৩) মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ। ৪) বিরোধীদের সংগঠন বা বিশ্বাসযোগ্যতা তেমন ছিল না।
সহজ কথা, দুলাল দাস চেয়ারম্যান হিসেবে যে কাজ করেছেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তিনি জিতবেন। বেশ বড় ব্যবধানেই জিতবেন। তাই যত্রতত্র লেঠেল বাহিনী নামাতে হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী! সে তো বুথে থাকবে। পাড়ায় পাড়ায় বা বাড়িতে বাড়িতে শাসানি দেওয়াই যেত। সেটুকু শক্তি বা সামর্থ্য ছিল। নগ্নভাবে প্রশাসনকেও ব্যবহার করা যেত। অর্থাৎ, কোনও দিক থেকেই ‘অনুপ্রেরণা’র অভাব হত না।
কিন্তু এসবের আশ্রয় নিতে হয়নি। উল্টে বারবার তিনি আশ্বস্ত করেছেন, বিরোধীরা কোথাও আক্রান্ত হলে আমাকে জানান। ভোটের দিনও বলেছেন, কোথাও যদি এজেন্ট বসাতে সমস্যা হয়, দলের কেউ যদি মারামারি করে, আমাকে জানান। আমি এজেন্ট বসিয়ে দিয়ে আসব। হ্যাঁ, এই সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছেন।
সহজ কথা, তিনি জনগণের মুখোমুখি হওয়ার সৎ সাহস দেখিয়েছেন। প্রশাসক হিসেবে যে উন্নয়ন বা কাজ করেছেন, তার ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি যথার্থই জয়ী।তাঁকে জয়ী বলে মানতে কোনও দ্বিধা নেই। অভিনন্দন জানাতেও কোনও কুণ্ঠা নেই।
কিন্তু কেউ কেউ উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসেবে ছবিতে ছবিতে ভরিয়ে তোলেন। কিন্তু জনতার রায় নিতে ভয় পান। তাই জেলায় জেলায় উন্নয়নকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়।
দুলাল দাস কি বিজেপি বা সিপিএম–কে হারিয়েছেন? একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, দুলাল দাস আসলে কাকে হারালেন!