দোহাই, সিবিআই চাইবেন না

সজলকান্তি বরাট

বেঙ্গল টাইমসের ভোটকর্মীর ডায়েরির বেশ কয়েকটা কিস্তি পড়লাম। আমি অবশ্য সরাসরি ভোট নিয়ে কিছু লিখতে চাই না। ধরে নিন, আমার বুথের অভিজ্ঞতাও কিছুটা একই রকম। নিজেদের অসহায়তার বিজ্ঞাপন নাই বা করলাম।

আমি নিহত শিক্ষক রাজকুমারের বিষয়ে আমার মনোভাব তুলে ধরতে চাই। অনেকেই দেখছি, সিবিআই তদন্তের দাবি তুলছেন। নানা জেলায় এই দাবি উঠছে। এমনকী শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেওয়া ডেপুটেশনে এই দাবি উঠেছে। আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও এই দাবি তুললেন।

কিন্তু কেন জানি না, এই দাবির সঙ্গে একেবারেই একমত নই। কোনও ঘটনার সিবিআই তদন্ত চাওয়া মানে, সেই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সাহায্য করা। বিশ্বাস করুন, এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে একেবারেই আস্থা নেই। যেটুকু আস্থা ছিল, তাও দিন দিন হারিয়ে গেছে। তার জন্য সিবিআই কর্তারা নিজেরাই দায়ী।

rajkumar3

গত দশ বছরে সিবিআই আমাদের রাজ্যের কোন তদন্তের কিনারা করতে পেরেছে?‌ তাপসী মালিক নিয়ে তো অনেকে সিবিআই চেয়েছিলেন। আজও সুবিচার হয়েছে?‌ সেটি আত্মহত্যা না খুন, এই সিদ্ধান্তে আসা গেছে?‌ নন্দীগ্রাম নিয়ে তো খুব সিবিআই চেয়েছিলেন। ফল কী হল?‌ আর এই তৃণমূল জমানায়? সারদা কাণ্ড হিমঘরে চাপা পড়ে আছে। নারদাও তাই। কী যে তদন্ত করছেন, তাঁরাই জানেন। শুরুর দিকে কয়েকটা গ্রেপ্তার, ব্যাস। আসল মাথাদের দিকে এগোতেই পারল না। বারোমাসই তাঁদের শীতঘুম চলে। বিজেপি নেতারা এত হম্বিতম্বি করছেন। একবার দিল্লিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তো সিবিআই কেন হাত গুটিয়ে বসে আছে?‌ যে তদন্ত সাত দিনে হয়ে যাওয়ার কথা, চার বছরে তার কতটুকু হয়েছে?‌ বলতে দ্বিধা নেই, চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এই সিবিআই। অন্যেক হাতের পুতুল হতে হতে নিজেদের সমস্ত দক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়েছে।

সেই কারণেই বলছি, এই তদন্তের সিবিআই তদন্ত দিয়ে কোনও কিনারা হবে না। একে একে সব প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে। সতেরো বছর পর হয়ত মামলা উঠবে। সবাই বেকসুর খালাস পাবে। আর শাসক দলও নিজেদের দায় এড়িয়ে যাবে। বলবে, দেখুন, সিবিআই কিছু করতে পারল না। এটা বিরোধীদের কুৎসা ছিল।

তাহলে উপায়?‌ আমার মতে, সিবিআই তদন্তের দাবি করা ঠিক হবে না। তার বদলে রাজ্য সরকারের ওপরই চাপ তৈরি করা হোক, দ্রুত যেন কিনারা হয়। রাজকুমারের বিচারের দাবিতে ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। সেটি যেন কদিন পর নিষ্ক্রিয় না হয়ে যায়। সবাই সেখানে নিজেদের বন্ধুদের যুক্ত করুন। রোজ অন্তত মনে করিয়ে দিন, সরকার কিছু করতে পারল না। সবাই ভোটে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখুন। কীভাবে ভোট হয়েছে, রোজ সেই ছবিটা সামনে আসুক। যে অফিসাররা ছাপ্পার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হোক। সিবিআই কিছু করতে পারবে না। কোর্টও লম্বা শীতঘুম দেবে। দিক। কিন্তু আমরা তো রোজ নিজেদের ক্ষোভ তুলে ধরতে পারি। সরকারকে একটু হলেও চাপে রাখতে পারি। ‌

(‌এটি ওপেন ফোরামের লেখা। মতামত লেখকের ব্যক্তিগত। আপনি এর সঙ্গে একমত হতে পারেন। ভিন্নমতও থাকতে পারে। এটি পাঠকের মুক্তমঞ্চ। খোলা মনে নিজের মতামত মেলে ধরতে পারেন। মতামতের ওপর সম্পাদকীয় স্টিম রোলার চালানো হবে না। তবে তা হতে হবে শালীন ও মার্জিত ভাষায়। গালাগাল বা খিস্তিখেউড় নয়। শালীন ভাবেও চরম সমালোচনা করা যায়। সেই দরজা সবসময় খোলা। )‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.