হঠাৎ শিশু কমিশনের এত সক্রিয়তা কেন?‌

কৌশিক রায়

ঘটনাটি জলপাইগুড়ি জেলার। জেলা পরিষদের এক বিজেপি প্রার্থী। নাম অলক সেন। হঠাৎ তাঁর বাড়িতে পুলিশ চড়াও। বিষয়টা কী?‌ তিনি নাকি এক কিশোরীকে নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছেন। ব্যাস, ওখানেই বিচার হয়ে গেল। পুলিশ সেই মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে গেল। বাচ্চাদের হোমে জমা করে দিল। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দেওয়া হল।

খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, এই প্রার্থীর বাড়িতেই সেই কিশোরী থাকে। তের বছর ধরে আছে। কলকাতার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে তাকে পড়ানো হচ্ছে। নিজের মেয়ের মতো করেই মানুষ করছেন ওই দম্পতি। আধার কার্ড থেকে রেশন কার্ড। বাবা–‌মা হিসেবে এই দম্পতিরই নাম। অর্থাৎ, মেয়ের পরিচয়েই মানুষ করছেন। আইনি দত্তকও নিয়েছিলেন।

যেহেতু তিনি অন্য দলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাই ভোটের আগে চূড়ান্ত হেনস্থা করতে হবে। পুলিশকে সেই কাজে লাগানো হল।

open forum3

এই পর্যন্ত তবু না হয় ঠিক আছে। শাসক দল স্থানীয় স্তরে এই জাতীয় অপকর্ম করেই থাকে। লোকাল থানাকে ব্যবহার করেই থাকে।

কিন্তু এখানেই থামল না। কাজে লাগানো হল শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনকে। পেটোয়া একগুচ্ছ লোককে বিভিন্ন কমিশনের মাথায় বসিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। যাঁদের চেয়ারম্যান করা হচ্ছে, তাঁরা জানেনও না সেই কমিটির কাজটা কী। শুধু জানেন, কীভাবে পেটোয়া হয়ে কাজ করতে হয়।

শিশু কমিশনও ঠিক সেটাই করল। তারা নানা চিঠইচাপাটি শুরু করে দিল। এমনকী নির্বাচন কমিশনেও চিঠি পাঠিয়ে দিল। এই লোক কেন ভোটে দাঁড়াবে, যন তাঁর প্রার্থীপদ খারিজ হয়।

শিশু কমিশন জেলার এসপি–‌কে চিঠি লিখতে পারে। সরকারি আমলাদেরও লিখতে পারে। ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাতে পারে। তাই বলে নির্বাচন কমিশন!‌ শাসক দল চাইছে বলে এতটা করতে হবে?‌ যদি সেই প্রার্থীর দত্তক নেওয়ার মধ্যে কোনও ত্রুটি থেকেও থাকে, কমিশন ডেকে পাঠাতে পারত। পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত। তাই বলে প্রার্থীপদ বাতিলের আবেদন!‌

কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চ্যাটার্জি। যিনি নিজেই জানেন না, তাঁর কাজটা ঠিক কী। মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন বা অন্য নানা কমিশন কার্যত রাবার স্ট্যাম্প হয়ে গেছে। শিশু কমিশন বোধ হয় তাদেরও ছাপিয়ে গেল। একেবারে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিজেদের জড়িয়ে ফেলল।

কমিশন বুঝিয়ে দিল, তাদের ওপর আর ভরসা রাখা যায় না। তারা বড়জোর একটা পেটোয়া শাখা সংগঠন। তার বেশি কিছু নয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.