সন্দীপ লায়েক
চারিদিকে একটাই নাম-অনুব্রত, অনুব্রত এবং অনুব্রত। দূরে সুশীল সমাজ তাকে বলছেন অমানুষ, দুর্বৃত্তরা রেগে বলছেন অসভ্য-জানোয়ার, সমর্থকরা আদুরে গলায় বলছেন মাথায় অক্সিজেন কম যায়।
অন্যদিকে, খবরের কাগজের সম্পাদকরা তাঁকে শিরোনাম উৎসর্গ করে বসে আছেন, কবিরা তাঁকে নিয়ে ধড়াদ্ধড় কবিতা লিখে ফেলছেন, গল্পকাররা পটাপট গল্প ফেঁদে ফেলছেন, আমার মতো আনাড়িরা লিখছে লটপটে প্রবন্ধ! মোটকথা তাঁকে ছাড়া ভাবাই যাচ্ছে না।
এককথায় বললে, আমাদের অনুব্রতদা সুপারহিট। বঙ্গমাতাকেও আজকাল কেমন চুনোপুঁটি বলে মনে হচ্ছে- সুপুরি কিলারের গল্প ফাঁদতে হচ্ছে।
তবে যে যাই বলুন ভাই, একটা কথা মানতেই হবে, জাত ফিল্মমেকাররা যেমন হিট ফিল্মের ফর্মুলা জানেন, তেমনি জানেন আমাদের অনুব্রতদাও। কখনও ওপেন এয়ারে বোম মারছেন, কখনও চড়াম চড়াম ছাড়ছেন, কখনও বাজারে গুড় বাতাসা ছাড়ছেন। কখনও বা উন্নয়নকে ন্যাংটো করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। কখনও বা শঙ্খকে খাস্তা ডায়ালগ ঝাড়ছেন।
কলেবরটা একটু মোটা মানছি, কিন্তু এলেম আছে লোকটার। সারাক্ষণ দুরন্ত অ্যাকশনের ফুলঝুরি, এক একটা ডায়ালগে সিটি আর হাততালি- বক্সঅফিস জমজমাট।
তাবলে শুধু ভাল ফিল্ম বানালেই ব্লকবাস্টার হয় না। সিজিনটাও ইম্পরট্যান্ট -দীপাবলী, ক্রিসমাস, ঈদ। অনুব্রতদার পছন্দের সিজন নির্বাচন। তখন তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে- এক্কেবারে ইস্কাবনের টেক্কা।
অন্যমনস্ক হয়ে কয়েকটা প্যারা লিখে ফেলেছি। পড়ে মনে হতে পারে তাঁকে নিয়ে খিল্লি করছি! আসলে অমন মনে হয়! কিছু লোকের মুখ দেখলেই মনে হয় যেন চুরি করে কিছু চিবোচ্ছে, আমার লেখার ক্ষেত্রেও নাকি তাই। শুভানুধ্যায়ীরা বলেন, আমি নাকি সিরিয়াস-নেসের ধারপাশ দিয়ে যাই না। সারাক্ষণ খিল্লি করি। তাই বাপু পরের প্যারাগুলো সিরিয়াস করে লেখার চেষ্টা করছি।
কথায় আছে আপ ভালা তো জগৎ ভালা। যারা তাঁকে গালিগালাজ করছেন, আদতে তাদের পিছনেই গন্ধ, তারাই মন্দ। অনুব্রতদা আসলে একজন খাঁটি মানুষ, জেনুইন মানুষ বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই।
সৎ মানুষ, এককথার মানুষ। সহজ কথাকে সহজ করে বলতে জানেন। জীবনটা তাঁর জেমস বন্ড-007 র মত ওপেন সিক্রেট। এক্কেবারে খোলা পাতা। ব্যাকস্টেজে কেউ প্রম্পট করেন কিনা, কেউ জানে না- তবে যা বলেন মুখ উঁচিয়ে, যা করেন বুক চিতিয়ে।
বঙ্গমাতার কাছে দায়িত্ব নিয়েছিলেন উন্নয়নকে পথে দাঁড় করিয়ে বিরোধী শূন্য করবেন, করেছেন। বলেছিলেন, ভীষ্মের মত সব শর নিজ গায়ে নেবেন, নিয়েছেন। রাজপরিবারকে আড়ালে রাখবেন, রেখেছেন। অন্যদের ইনস্পিরেশন দেবেন- দিয়েছেন। বিরোধীদের সম্মান দেবেন। -দিয়েছেন।
শেষেরটা মানতে পারছেন না? তো শুনুন। দিলীপবাবু থেকে সূর্যবাবুরা এতকাল ধরে যে উন্নয়নের গোলকধাঁধা সমাধান করতে নাকানি চোবানি খাচ্ছিলেন, চুটকিতে তিনি উলঙ্গ করে সমাধান করে দিয়েছেন।
এটাও জেনে রাখুন, যোগ্যতা আছে বলেই তিনি তাঁর রাজত্বে বিরোধী হটিয়ে একশোর মধ্যে তিনি একশো পার্সেন্ট পেয়েছেন। তাই বলে ভাইপোকে কি ফেলে দিয়েছেন? যথেষ্ট মানসিক হেল্প করেননি কি? -নাহলে সে পুঁচকে নিজের কেন্দ্রে ৯৩ শতাংশ বিরোধীশূন্য করে কী করে? বাঁকুড়াতেও তো হেসে খেলে লেটার মার্কস পাইয়ে দিয়েছেন। বাকিদেরও হতাশ করেননি। পাশের জমানায় ইনস্পিরেশন দিয়ে চৌত্রিশ পার্সেন্ট তুলে পাশ করিয়ে দিয়েছেন।
এরপর আপনিই বলুন? এই পবিত্র মানুষটি কি খিল্লির যোগ্য?
যিনি বঙ্গমাতাকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে পবিত্র রাখেন, বঙ্গবাসীকে ধমকে সামলে রাখেন- তিনি কি তিরস্কারের পাত্র?
যিনি বহু মানুষের কর্মনাশা ভোটের ছুটি নষ্ট হতে দেন না, এই গরমে ভোটের কষ্ট সহ্য করতে দেন না, তিনি কি তিরস্কারের পাত্র?
যদি হ্যাঁ বলেন তবে বলব- পাগলা রে..তুই আজও মানুষ চিনলি না?
তবে আমি চিৎকার করে একটাই কথা বলবো, অনুব্রতদা জিন্দাবাদ। অনুব্রতদা যুগ যুগ জিও..