‌জটিলতা তৈরি করছে হাইকোর্ট নিজেই

রাজ্য প্রশাসন চূড়ান্ত ব্যর্থ। পুলিস ব্যর্থ। নির্বাচন কমিশন ডাঁহা ফেল। হাইকোর্টের ভূমিকায় অনেকে ধন্য ধন্য করছেন। কিন্তু তাঁদের বড়জোর পাসমার্ক দেওয়া যায়। নানা সময় নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছে এই প্রতিষ্ঠানও। লাগামছাড়া সন্ত্রাসের মুখেও তাঁরা ছিলেন দার্শনিক প্রশ্রয়দাতা। শুরু থেকে কড়া হাতে হাল ধরলে এই অরাজকতা তৈরিই হত না। লিখেছেন রজত সেনগুপ্ত।।

জট ছাড়াতে লোকে কোর্টে ছোটে। কিন্তু কখনও কখনও কোর্ট নিজেই নানা জট পাকিয়ে দেয়। একেক সময় একেক রকম রায় দেয়। কোন বিচারপতির কী মর্জি, তিনিই জানেন।

অনেক আগে থেকেই দাবি উঠেছিল, নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকবে না। পুলিশ যে ভূমিকা পালন করছে, তাদের ওপর ভরসা রাখা যাবে না। মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছেন বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত চাই। ই মেলে মনোনয়নের সুযোগ দেওয়া হোক। হাইকোর্ট সেই দাবি উড়িয়ে দিল। ভাঙড়ে ৯ জন প্রার্থী হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন জমা করেছিলেন। কোর্ট নির্দেশ দিল, এই মনোনয়ন জমা নিতে হবে। একদিন মনোনয়নের দিন বাড়ল। সেদিনও একইরকম সন্ত্রাস। কেউ কেউ ই মেলে জমা করলেন। কোর্ট বলল, দুপুর তিনটে পর্যন্ত যাঁরা ইমেলে জমা দিয়েছেন, তাঁদের মনোনয়নগুলি খতিয়ে দেখতে হবে।
অর্থাৎ, একবার বলছেন, ই মেলে দেওয়া যাবে না। আবার বলছেন, যাঁরা ই মেলে দিয়েছেন, তাঁদেরগুলি গ্রহণ করতে হবে। আগে যদি বলা হত, ই মেলে দেওয়া যাবে, তাহলে আরও অনেকে মনোনয়ন দিতে পারতেন। সব দলই অংশ নিতে পারত। কিন্তু হাইকোর্ট নিজেই জটিলতা তৈরি করল। দু পক্ষকেই পাল্টা মামলা করার সুযোগ দিয়ে দিল। একপক্ষ বলবে, ই মেলে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই জমা নেওয়া হয়নি। অন্যপক্ষ বলবে, ই মেলে মনোনয়ন দেওয়া যাবে, এমন নিয়ম থাকলে আরও বেশি জমা দিতে পারতাম। দুপক্ষেরই যুক্তি আছে।

high court1

কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে কিনা, তা নিয়েও নানা গড়িমসি। একবার বিচারপতিরা বলছেন, আমরা হস্তক্ষেপ করব না। যা করার নির্বাচন কমিশনই করবেন। আবার হস্তক্ষেপ করাও হচ্ছে। মনোনয়নের সময় বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ই মেলের মনোনয়ন জমা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে, হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করবে কিনা, নিজেরা ঠিক করুক।

নিরাপত্তা নিয়েও নানা গড়িমসি। কী কী হয়েছে, সারা রাজ্য দেখেছে। তারপরেও হাইকোর্ট তেমন কর্ণপাত করেনি। তিরষ্কার করেনি। সরকারকে বা নির্বাচন কমিশনকে তেমন ভর্ৎসনা করেনি। এখন দু একটা অন্যরকম সুর শোনা যাচ্ছে। শুরু থেকেই যদি নিজেদের কড়া অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে জেলায় জেলায় এই চেহারা দেখা যেত না। প্রশাসন একটু হলেও সজাগ হত। কিন্তু এরপরেও লাগামছাড়া সন্ত্রাস চলেছে, কারণ আদালত ছিল তার দার্শনিক প্রশ্রয়দাতা।

রাজ্য সরকার তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। নির্বাচন কমিশন তো চূড়ান্তই ব্যর্থ। হাইকোর্ট কিছুটা সফল। কিন্তু তাঁদেরও কি খুব সফল বলা যাবে?‌ বড়জোর টেনে টুনে পাসমার্ক দেওয়া যায়। এই অরাজকতার নৈতিক দায় কি হাইকোর্টও অস্বীকার করতে পারে?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.