আপনি আর যাই হোন, মীরা পাণ্ডে নন

রক্তিম মিত্র

নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র সিং সমীপেষু,

যাক, অবশেষে কিছুটা হলেও মানলেন। সরকারি কর্মীদের বললেন, রাজ্যে নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। মাথা উঁচু রেখে কাজ করুন। সমস্যা হলে আমাকে ফোন করুন।

নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। যে যতই সমস্যায় পড়ুক, আপনার কাছে তেমন ফোন আসবে না। কারণ, যাঁদের উদ্দেশ্যে শিশির মঞ্চে ভাষণ দিলেন, তাঁরা সবাই জানেন, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। বরং, আপনাকে ফোন করলে বিপদ আরও বাড়বে।

amarendra sing

শ্রীযুক্ত অমরেন্দ্র সিং, আপনি আর যাই হোন, মীরা পাণ্ডে নন। মীরা পাণ্ডেকে নিয়ে বছর পাঁচেক আগে কী ভোগানটাই না ভুগতে হয়েছিল!‌ ভদ্রমহিলা বুঝেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করানো যাবে না। কিন্তু তা হলে শাসক দলের মুশকিল। অতএব, মামলা। সেই মামলা গড়াল সুপ্রিম কোর্টে। শেষমেষ বাহিনী দিয়েই ভোট করিয়েছিলেন মীরা পাণ্ডে।

আর ভুল করেনি রাজ্য সরকার। সব প্রথাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনারের চেয়ারে বসানো হল ডব্লু বি সি এস অফিসারকে। সেই সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন, সন্ত্রাস কাকে বলে। পুরভোটে আগাগোড়া শাসকদলের তাঁবেদারি করে গেলেন। দেখেও কিছু দেখলেন না। বিরোধীরা লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়ে গেলেন। তিনি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়েই রইলেন। একদিন সন্ত্রাস ধেয়ে এল তাঁর চেম্বারে। ছয় মন্ত্রী তিন ঘণ্টা ধরে লাগাতার শাসিয়ে গেলেন। ভয়ের চোটে পদত্যাগই করে বসলেন সুশান্ত রঞ্জন।

আপনাকে কেন এই চেয়ারে বসানো হয়েছে, আপনি জানেন?‌ মুখ্যমন্ত্রী জানেন, আপনাকে বসালে কোনও আশঙ্কা নেই। যা বলা হবে, আপনি তাই করবেন। যেদিন ভোট চাওয়া হবে, যত দফায় চাওয়া হবে, তাতেই আপনি সায় দেবেন। রাজ্য যদি চায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে না, আপনাকে তাই বলতে হবে।

mira pandeysushanta ranjan2

 

শুরু থেকেই এই সব ফতোয়া মেনে নিতে শুরু করেছেন। শাসকেরা যা যা চেয়েছে, আপনি তাতেই সায় দিয়েছেন। প্রতিটি ব্লক অফিসে ঘিরে রয়েছে গুন্ডারা। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বিরোধীদের। আপনি দেখেও দেখেননি। খোঁজ নিচ্ছি, দেখছি, এসব বলেই কাটিয়ে দিয়েছেন। শাসক দল তো এটাই চেয়েছিল। মনোনয়নের শেষ দিন ৯ এপ্রিল। আর তোলার শেষ দিন ১৬ এপ্রিল!‌ সাত দিন সময়!‌ ভয় দেখিয়ে প্রত্যাহার করানোর জন্য এর থেকে অনুকূল ব্যবস্থা আর কী হতে পারে!‌ আর তাতে সিলমোহর দিলেন আপনি!‌ যদি মনোনয়ন জমা দেওয়াও যায়, মনোনয়ন তোলাতে যে যে সন্ত্রাস হবে, সেই পরিস্থিতি তো আপনিই তৈরি করে দিলেন।

বিরোধীরা বারবার দাবি জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর। আপনি জানেন, এতে রাজ্য সরকার চটে যাবে। তাই আপনারও কিছুই করার নেই। বড়জোর দু–‌একবার আবেদন নিবেদন। তারপর সেইসব চিঠি দেখিয়ে কাঁদুনি গাইছেন। বিরোধীদের বলছেন, আমি তো চাই, চিঠিও দিয়েছি। দেখা যাক।

যেন বেচাল না হয়, এর মধ্যেই হাফ ডজন নেতা–‌মন্ত্রী এসে আপনাকে শাসিয়ে গেছেন। আপনার চেম্বারে নিশ্চয় খুব মধুর কথা বলতে ওঁরা আসেননি। কী কী করবেন, কী কী করা চলবে না, আচ্ছা করে সবক শিখিয়ে গেছেন। আর আপনিও ‘‌হ্যাঁ স্যার’‌, ‘‌হ্যাঁ স্যার’‌ করে গেছেন। ওই নেতা–‌মন্ত্রীরা জানেন, যাই ঘটুক, কোনও ট্যাঁ–‌ফোঁ করার ক্ষমতা আপনার নেই।

তাই এখন পর্যবেক্ষকদের যতই আশ্বাস দিন, তাতে কারও আস্থা নেই। শুরুতেই মাথা বিকিয়ে বসে আছেন। হুকুম তামিল করে বসে আছেন। এরপর আর চাইলেও সাহসী হওয়ার উপায় নেই। বড়জোর আরেকটা সুশান্তরঞ্জন হতে পারেন। তাতে কিছুটা হলেও সম্মান বাঁচবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *