রক্তিম মিত্র
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে বলতেন, ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে।
সেই কবিই লেখেছিলেন, ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।’
হঠাৎ ফুলের প্রতি এত রাগ কেন? কবি বলেছিলেন, ফুলকে দিয়েই অনেক মিথ্যে বলানো হয়।
আরও একবার এই ফুলকে দিয়ে মিথ্যে বলানো হল। গুন্ডামির পর ফুল দিয়ে সৌজন্যের নাটক করা হল।
****
৯ বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াও হয়ত মনে মনে তেমনটাই বলছিলেন। কিন্তু সৌজন্যের কারণে বলে উঠতে পারেননি।
এই ছিয়াত্তর বছর বয়সে তিনি তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত। হাসপাতালের দিন কাটছে। আর তাঁর কাছে কিনা ফুল পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাশীপুর ব্লক অফিসের সামনে কারা হামলা চালিয়েছেন বর্ষীয়াণ বাসুদেব আচারিয়ার ওপর? তৃণমূল দাবি করবে, আমরা নই। কাগজে বলা হবে, বহিরাগত দুষ্কৃতী। এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সরাসরি ‘তৃণমূল’ বলাই ভাল।
শুধু পুরুলিয়া নয়, রাজ্যের সব জেলাতেই এই চিত্র। কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। বাসুদেব আচারিয়া থেকে রামচন্দ্র ডোম, সুজন চক্রবর্তী থেকে অমিয় পাত্র, অজিত রায় থেকে বিশ্বনাথ কারক। তালিকাটা বেশ লম্বা।
কারও মুখে গামছা, মাথায় হেলমেট। আবার কারও কারও সেসব আড়াল দরকার হচ্ছে না। কারণ, বাইরে থেকে আনা হচ্ছে, এলাকার কেউ তাদের চেনেও না। বাইরে থেকে হঠাৎ সমাজসেবা করতে এই ‘মহামানব’রা এসে গেল, এমন ভাবার কারণ নেই।
অপরাধ বিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম বলে, কোন কাজটায় কার লাভ হচ্ছে, সেটা আগে দেখতে হয়। এই সব মনোনয়নে বাধা দিলে স্থানীয় স্তরে লাভ কাদের হচ্ছে, সেটা দেখলেই পরিষ্কার।
স্বপন বেলথরিয়ার মতো মাফিয়াদের টিকিট দিলে যেটা হওয়ার, সেটাই হয়। পাহাড়ের তলায় দাঁড়িয়ে পাহাড়ের উচ্চতা বোঝা যায় না। স্বপন বেলথরিয়াদের মতো অর্বাচীনদের সেই দশা। ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে বাসুদেব আচারিয়ার অবদান কী, সেটা ওই গণ্ডমূর্খদের জানার কথা নয়। তারা শুধু জানে লেঠেল বাহিনী লেলিয়ে দিতে।
ফুল পাঠানো মানেই যেন সৌজন্যের বাতাবরণ। স্তাবক মিডিয়া তো আছেই। যারা লাঠি মারল, যারা রক্তাক্ত করল, তারাই কিনা শুভেচ্ছার ফুল পাঠালো। সত্যিই, ফুল বড় সস্তা হয়ে যাচ্ছে। যে পারছে, পাঠিয়ে দিচ্ছে।
যদি সত্যিই সদিচ্ছা থাকে, আগে ওই স্বপন বেলথরিয়াদের গ্রেপ্তার করা হোক। দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। আগে এই সদিচ্ছার নমুনা রাখুন। তারপর না হয় ফুল পাঠানোর নাটক করবেন। ফুল পাঠাতে গেলেও যোগ্যতা লাগে। আগে সেই যোগ্যতা অর্জন করুন।