কোনটা আসল সমস্যা, বিরোধীরা বুঝেও বুঝল না!‌

সরল বিশ্বাস

সবকিছুর পেছনে চক্রান্ত দেখাটা যেন একটা রোগে পরিণত হয়েছে। আর তাই আসল সমস্যা কোনগুলো, তা নেতৃত্ব বুঝতেই পারছেন না। আর রোগ না বুঝলে যা হয়!‌ চিকিৎসাটাও ভুল পথেই এগোয়।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নিয়ে নানা কথা শুনছি। অথচ, যেগুলো আসল সমস্যার দিক, সেগুলো সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিজেপি থেকে বলা হচ্ছে, মামলা করা হবে। কেন?‌ হঠাৎ করে নাকি ভোট ঘোষণা করে দেওয়া হল। বিরোধী বলে কি এতটুকু দায়িত্বশীল হতে নেই!‌ যা খুশি বলে দিলেই হল!‌ ভোট তো নির্ধারিত সময়েই হচ্ছে। তাহলে, ভোটের সময় নিয়ে এত হইচই কেন?‌

হ্যাঁ, কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার দাবি উঠতেই পারে। সেই দাবিতে কোর্টে যাওয়াও যেতে পারে। তাই বলে, ভোট কেন মে মাসে হচ্ছে, তাই নিয়ে মামলা?‌ তাহলে কোন সময়ে ভোট চাইছিলেন!‌

election commission

বামেরাও বলতে শুরু করেছেন, প্রস্তুতি ছিল না। সে কী?‌ এত বছর ধরে এত এত মিটিং হল। সেইসব মিটিংয়ে কী নিয়ে আলোচনা হত?‌ প্রসেনজিৎ নতুন কী সিনেমা করছেন?‌ ওয়ার্নার কেন বল বিকৃত করতেন?‌ স্টিফেন হকিং কী নিয়ে গবেষণা করতেন?‌ এসব নিয়ে নিশ্চয় আলোচনা হত না। আলোচনা হত পঞ্চায়েত নিয়েই। বিভিন্ন এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী, কৌশল এসব নিয়েই। তাহলে কেন বলছেন প্রস্তুতি ছিল না?‌ কোথায় কাকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা ছিল না?‌ যদি না থাকে, তাহলে তা নিতান্তই নিজেদের অক্ষমতা। সেই অক্ষমতা ঢাক পিটিয়ে বিজ্ঞাপন না করাই ভাল।

হ্যাঁ, একটা জায়গায় যথার্থ আপত্তি তোলা যেত। কিন্তু সেই ব্যাপারে তেমন উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ ৯ এপ্রিল। মনোনয়ন পরীক্ষা ১১ এপ্রিল। এই পর্যন্ত আপত্তির কিছু নেই। এরপরই আপত্তির আসল জায়গাটা। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৬ এপ্রিল। অর্থাৎ, মনোনয়নের শেষ দিনের পরেও হাতে সাত দিন সময়। এটা যে কী মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে, বিরোধীরা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। অর্থাৎ, কেউ মনোনয়ন দিলেও তাঁকে নানা চাপ দেখিয়ে প্রত্যাহার করানোর জন্য সাতদিন সময় পাওয়া যাচ্ছে। সাত দিন ধরে গ্রামের একজন প্রার্থীর পক্ষে ক্রমাগত চাপ উপেক্ষা করা বেশ কঠিন। অনেকেই হয়ত ভয়ে বা প্রলোভনে মনোনয়ন তুলে নেবেন। আর প্রশাসনও নীরব দর্শকের ভূমিকাতেই থাকবে।

vote2

আমার মনে হয়, এটাই সবথেকে আশঙ্কার দিক। অথচ, এটা নিয়ে কাউকে তেমন সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে, বাস্তব সমস্যাগুলো এখনও নেতৃত্ব বুঝে উঠতে পারলেন না। শুধুমাত্র এই আপত্তিটা যদি জোরালোভাবে তুলে ধরা হত, একটা ইতিবাচক ছাপ পড়ত। হয়ত নির্বাচন কমিশনকে বোঝানোও যেত। এটা নিয়ে মামলাও হতে পারত। তা না করে উল্টোপাল্টা বিষয় নিয়ে আপত্তি, মামলার হুমকি।

এমন বিরোধী থাকলে শাসকের সত্যিই মঙ্গল। শাসকরা বোধ হয় এমন বিরোধীই চায়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.