এই মিছিল ব্যর্থতার মিছিল

প্রান্তিক পত্রনবীশ

কে কত বড় রামভক্ত, কে কত বড় হনুমান, তার প্রতিযোগিতা চলছে। একদল অনেক আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল, তারা রাম নবমী পালন করবে। আরেক দলই বা পিছিয়ে থাকবে কেন?‌ তারাও নেমে পড়ল রামকে নিয়ে। রামের প্রতি কত ভক্তি!‌ গোটা বাংলা দেখল এক কুনাট্য।

এ যেন এক ব্যর্ততার মিছিল। এ যেন এক হতাশার মিছিল। প্রশাসক হিসেবে দুই দলই আসলে চূড়ান্ত ব্যর্থ। সরকারের কী কাজ, প্রশাসনের কী কাজ, এই দুটো দলই এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। তাই রামকে নিয়ে মেতে থাকো। অস্ত্র, ঢাক, ঢোল — এসব দিয়েই মানুষকে ভুলিয়ে রাখো। ভাবতে অবাক লাগে, কোনদিকে চলেছি আমরা!‌

ramnabami6

বিজেপি নাকি খুব রাম ভক্ত। রাজ্য বিজেপি–‌র কজন নেতা সংস্কৃত জানেন!‌ সংস্কৃতে পাঁচ লাইন বলতে পারবেন?‌ সংস্কৃতের কথা তো ছেড়েই দিন। জীবনে কৃত্তিবাসের রামায়ন পড়েছেন?‌ পড়াও ছেড়ে দিন। অধিকাংশ নেতা কোনওদিন চোখেও দেখেননি। জিজ্ঞেস করুন শত্রুঘ্ন–‌র স্ত্রীর নাম কী, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবেন। এঁরা নাকি রামভক্ত!‌ রাজত্ব ছেড়ে রাম বনবাসে চলে গিয়েছিলেন। আর এঁরা ক্ষমতায় থাকার জন্য কী নির্লজ্জ নোঙরামিটাই না করে চলেছেন। এঁরা রামভক্ত!‌ দিলীপ ঘোষের যুক্তি, রাম নাকি জন্মের সময় অস্ত্র নিয়ে জন্মেছিলেন। তাই অস্ত্র নিয়ে মিছিল হবে। রাম তো নগ্ন হয়ে জন্মেছিলেন। তাহলে, নগ্ন হয়েই মিছিল করুন। রাম তো মোবাইল ব্যবহার করতেন না। তাহলে আপনারা করেন কেন?‌ রাম পায়ে হেঁটে বনে গিয়েছিলেন, আপনারা গাড়ি চড়েন কেন?‌ শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যারা মিছিলে নামায়, তারা আর যাই হোক, রাম ভক্ত হতে পারে না। যদি রাম সত্যিই থেকে থাকেন, তাহলে রাবণকে ছেড়ে দিয়ে এই নরাধমদের হয়ত আগে উচিত শিক্ষা দিতেন।

tmc ramnabami

অন্যদিকে তৃণমূল। তাঁরাও রামভক্ত হয়ে নেমে পড়েছে। হিন্দুত্বের জমি বিজেপি একা কেন দখল নেবে?‌ সামনে পঞ্চায়েত আসছে। অতএব, তাদেরও আসরে নেমে পড়তে হবে। নিজেদের খাঁটি হিন্দু প্রমাণ করতে হবে না?‌ একইসঙ্গে মুসলিম তোষণও করতে হবে, আবার রামনবমীও করতে হবে। আসলে, সরকারের কী কাজ, এঁরা আজও শিখল না। সরকারি সভাকে রোজ দলীয় সভা বানিয়ে ফেলছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে একটা বড় কারখানা খুলুন। তারপর না হয় সেই আনন্দে মিছিল করবেন। শিল্প নেই, কর্মসংস্থান নেই, রাম নিয়ে মিছিল করছেন?‌ বিজেপি–‌র পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন?‌ বিজেপি–‌কে এভাবে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন?‌ যিনি বিরোধীদের ঘর জ্বালিয়ে দিতে বলেন, বোম মারতে বলেন, সেই হনুব্রতর মুখেও রামের মহিমা শুনতে হচ্ছে!‌ বাঙালির কী করুণ পরিণতি!‌
ফ্লেক্সের একদিকে রামের ছবি, একদিকে মমতার ছবি। ইস, রাম দেখে যেতে পারলেন না!‌

সারাদিন ধরে টিভিতে দুটো দলের দাপাদাপি দেখলাম। মূর্খামির প্রতিযোগিতা দেখলাম। এটুকুই বুঝলাম, এই হুঙ্কার আসলে নিজেদের মূর্খামিকে জাহির করার প্রতিযোগিতা। এ আসলে নিদারুণ ব্যর্থতার মিছিল। এ আসলে হতাশার মিছিল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.