সরল বিশ্বাস
আবার সেই তৃতীয় ফ্রন্টের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। রোজ কাগজে নানা খবর, চ্যানেলে নানা আলোচনা। কখনও আলোচনা হচ্ছে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। কখনও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চলে আসছেন নবান্নে। কখনও শোনা যাচ্ছে, চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির কথা।
অখিলেশ যাদব, লালু প্রসাদ যাদব, মায়াবতী, উদ্ধব ঠাকরে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ বিভিন্ন নাম ভেসে উঠছে। অনেকের সঙ্গে নাকি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথা হচ্ছে। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে একটি আলাদা ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা। শুরুতেই বলে দেওয়া যাক, এই জোট তেমন সফল হবে না। ভোটে কী ফল হবে, সে তো পরের কথা। তার আগেই নানা কারণে এই জোট ভেস্তে যাবে। করুণানিধির দল এলে জয়ললিতার দলের আসা সম্ভব? তৃণমূল থাকলে সিপিএমের থাকা সম্ভব?
পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূল কতগুলি আসন পেতে পারে? ধরে নিলাম ৩৫। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে তাঁর আসনই হবে সবথেকে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই জোটের অন্যতম চালিকাশক্তি তাঁরই হওয়ার কথা। কিন্তু কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এই জোট কতদূর যেতে পারে? বিজেপির আসন যদি কমে, তার সবথেকে বড় সুফল যদি কোনও দল পায়, সেটা হল কংগ্রেস। আর আঞ্চলিক দলগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা সত্যিই কম। লালুপ্রসাদ যাদব আর বামেরা ছাড়া আর কোনও দল সম্পর্কে জোর গলায় বলা যায়, এরা কখনই বিজেপি–র সঙ্গে যাবে না? বিজেপি হয়ত কমে ২০০ তে নেমে এল। বাকি ৭৭ জোগাড় করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তিন–চারটি দলকে পাশে টানলেই হল। আর এটুকু ম্যানেজ করা খুব একটা কঠিন হবে না। এমনকী যে তৃণমূল এত বিজেপি বিরোধীতার সুর চড়াচ্ছে, তারাই যে বিজেপি–কে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে না, এমন গ্যারান্টি দেওয়া যায়? অতীতে তারা বিজেপি–র সঙ্গে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকতেই পারে। বাকি দলগুলির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এরা বিজেপি সরকার গড়ার কাছাকাছি থাকলে সেইদিকে ঢলে পড়বে। অথবা, কংগ্রেস যদি ২০০ পেরিয়ে যায়, তবে দশ জনপথের অনুগ্রহ পেতে লাইন দেবে।
এতগুলো দলকে এক ছাতার তলায় রাখা সম্ভব নয়। মমতা ব্যানার্জির পক্ষে তো আরও সম্ভব নয়। তৃণমূল যখন এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, কারা পাশে ছিল? কংগ্রেস, যারা এখন নেই। এসইউসি, তারাও সরে গেছে। আরও অনেক ছোট ছোট দল ও শক্তি। কাউকেই কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি মমতা। আর তাঁর নেতৃত্ব মানে নতজানু হয়ে সবকিছু মেনে নেওয়া। যেটা ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাসরা মাথা নিচু করে মেনে নেন, সেটা অখিলেশ যাদব বা মায়াবতীরা মেনে নেবেন?
তাই যতই ঘটা করে নবান্নে আসুন, যতই হাত ধরাধরি করে ছবি তোলা হোক, তৃতীয় ফ্রন্ট কখনই মাথা তুলে দাঁড়াবে না।