হঠাৎ করেই বেড়িয়ে পড়া কোপাইয়ের সন্ধানে। গ্রাম্য হাট থেকে বাউল গান। আচমকা রি–ইউনিয়ন থেকে আড্ডা–হই হুল্লোড়। আক্ষেপ থেকে মুগ্ধতা। টুকরো টুকরো অনেক ছবি ধরা পড়ল সন্দীপ লায়েকের লেখায়।
এক:
(শেষবেলায়)
রাত তখন সাড়ে সাতটা, রবিবার। আপাতত গন্তব্য শিয়ালদহ। দৌড়তে দৌড়তে কল্যাণী স্টেশনে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমাণ শিয়ালদাগামী লোকালে উঠে পড়লাম। আগামীকাল সোমবার অফিস যেতেই হবে, তাই বাড়ি পৌঁছনো দরকার যতদ্রুত সম্ভব।
কোনক্রমে ম্যানেজ করে লোহার শক্ত সিটে বসে পড়লাম। আবহাওয়া চূড়ান্ত গরম। অতক্ষণ ধরে্ গাড়িতে AC র ঠান্ডা হাওয়া সেটা হয়ত কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পকেট থেকে রুমালটা বের করে ঘাম মুছছি আর সময়ের সঙ্গে পাঞ্জা কষছি। –সবকিছু এত তাড়াতাড়ি কেন অতীতে চলে যায়?
এই কয়েকমুহূর্ত আগেও ওরা সঙ্গে ছিল। মনখারাপ করে একে একে বিদায় নিয়েছে। শেষজন মাত্র দশ মিনিট আগে। শৈলেন নেমেছে বর্ধমান বিকেল সাড়ে চারটেয়, শুভদীপ মগরা সন্ধ্যে সাতটা, সবশেষে মুঞ্জরন ও আমার ছাড়াছাড়ি কল্যাণী স্টেশন-সবে মিনিট দশ।
ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত শরীর, মুখে তৃপ্তির লেশ। ট্রেন চললে হাল্কা একটা হাওয়া এসে গায়ে লাগছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি। চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠছে সোনাঝুরি বা খোয়াই হাটে আদিবাসী নাচের দৃশ্য, ভেসে আসছে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ, বাউলের উদাসী গান, দূরে নিশ্চুপে বয়ে যাওয়া শান্ত কোপাই, কঙ্কালিতলায় আরতির ঘণ্টাধ্বনি, শান্তিনিকেতনের ছায়াঘেরা শীতলতা, আমাদের মত ভার্চুয়াল ব্যাচেলরদের খুনসুটি ও কলতান।
দুই
(রি-ইউনিয়ন)
ওদের সঙ্গে মুখোমুখি হোয়ার সুযোগ প্রায় ফেলে এসেছি ইউনিভার্সিটি শেষের সময়েই। ফোন কলে যোগযোগও বন্ধ প্রায়। একটা লাইক বা একটা কমেন্ট জানান দেয় ওরা আজও আছে, হয়ত ভালই আছে।
হঠাতই এই বৃহস্পতিবার রাত্রে মুঞ্জর একটা দরকারি ফোনকলে বেড়ানোর প্রসঙ্গ উঠে আসে। “বাউল ডাকছে” বলার সঙ্গে সঙ্গেই ডিসিশন। -চলো মন শান্তিনিকেতন! বাকিরা গেলে ভাল, নাহলে দুজনেই। কয়েকজন বন্ধুকে বিভিন্ন মাধম্যে জানানো হল সেই প্রস্তাব। নানারকম পারমুটেশন কম্বিনেশন করে ফাইনালে উঠে এল এই চারজন।
সকাল সাড়ে সাতটায় কল্যাণীতে পৌঁছে অপেক্ষারত মুঞ্জরনের গাড়িতে চড়ে বসলাম। কিছু দূর পর মগরায় শুভদীপকে নিয়ে পান্ডুয়ার উপর দিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে ছুটে চলল আমদের ALTO 800।
ভোরে উঠলে নাকি খুব ক্ষিদে পায়, মানে আমাদেরও পেল আর কি! শক্তিগড়ে গাড়ির বাইরে নেমে বুঝলাম বাইরের তাপমাত্রাটা। চৌদ্দই অক্টোবর সকাল নটাতেই পুড়ে যাচ্ছে সব! বেলা বাড়লে কী হবে ওপরওয়ালাই জানেন। পেটের গ্যাস কমানোর টোটকা মেনে চা কচুরি পেটপুরে খেয়ে নিলাম সকলে। চারটে ডাব তুলে নিলাম গাড়িতে।
বর্ধমান ঢোকার আগে ওভারব্রিজের সামনে থাকার কথা শৈলেনের। সাড়ে-নটায় ওকে সময় দেওয়া ছিল। বাঙালি হিসেবে আমরা এক্কেবারে সময় মতই আসছি। অর্থাৎ ঠিক আধা ঘন্টা লেট করে ফেলেছি ওকে তুলতে। সময় সকাল দশটা। ও ওঠার কিছুক্ষণ পরে ফাঁকা একটা জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ধূমপান শুরু, ডাবগুলো সাঙ্গ।
আবার হুহু করে এগিয়ে চলল গাড়ি। সব ভার চালকের ওপর ছেড়েই আমরা নিশ্চিন্ত। বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর..
— ডান দিকের বাঁকটা কইরে?
কথা শুনে একসঙ্গে সবাই চালকের দিকে স্লো মোশনে ঘুরে তাকালাম। তারপর পটাপট সবগুলো GPS একসঙ্গে অন হয়ে গেল।
GPS বলছে সে বাঁকটা আমরা অনেকক্ষণ আগেই ছেড়ে এসেছি। উল্লাসে ফেটে পড়লাম সকলে। আমদের আজ ভুল করাতেই আনন্দ! মুঞ্জ অর্থাৎ চালককে inspire করতে বাহবা দেওয়া হল। ভুল করলে এটাই আমাদের নিয়ম যে!
তিন:
(পথের অলিগলি)
বর্ধমান পেরোতেই বাম দিকের রাস্তাটা চলে গেছে বোলপুর, শান্তিনিকেতন। রোড ইন্ডিকেটর বলছে 45 কিমি। হিসেব মত ঘন্টা খানেক লাগার কথা। রাস্তার শুরুটা ভাঙ্গা কিন্তু তারপর থেকে ছবির মতো সুন্দর।
এবার ফলন হয়েছে দারুণ। প্রকৃতি প্রাণ উজাড় করে ক্ষেত ভরিয়ে দিয়েছে সবুজ ধানগাছে। তারই মাঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা কালো মসৃণ পথটা চলে গেছে বোলপুরের দিকে।
খেতের মাঝে কোথাও এক আধটা মানুষের মাথা, কোথাও সরু মেঠো পথ দিয়ে চলে যাছে ট্রাক্টর, কোথাও দুলছে কিছুটা ঝরে যাওয়া কাশফুল। এদিকে গাড়ির মধ্যে Youtube থেকে বাউল শুরু করে দিয়েছে তার বাউলা গান–“মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের ..”
২০–২৫ কিমি যেতেই আবার ছন্দপতন। পথ জ্যাম করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশো গাড়ি। শোনা গেল, কোথাকার জল নাকি কোথায় যেতে দিচ্ছে না–তাই রোড ব্লক।
দুর্ভাগ্যের ভাগ্য সহায় ছিল না। ঘুর পথ দিয়ে যাব কি যাব না ডিসিশনে আসতে না আসতেই সংকটমোচন। আবার যাত্রা শুরু।
মিনিট কুড়ি পর ঝাঁ চকচকে বোলপুর স্টেশনের যখন দেখা মিলল ঘড়ির কাঁটা তখন ১২ টার ঘরে আটকে। ক্রমে বোলপুর বাজার ছাড়িয়ে ডানদিক নিয়ে আবার বামদিক। ঠিক করা আছে প্রথমেই আমরা যাব সোনাঝুরি, যেখানে প্রতি শনিবার বসে খোয়াই হাট। মূলত সেখানেই আসেন বাউলেরা (কংকালী তলাতেও আসেন)।
আমাদের প্রধান লক্ষ্য বাউল ও হাট। তাই সোনাঝুরি সংলগ্ন রিসর্টগুলো আমাদের ফার্স্ট প্রেফারেন্স। না পেলে শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি নেব, সব শেষে বোলপুর বাজার তো আছেই।
কিছুটা যেতেই সবুজ গাছের ফাঁকে শান্তিনিকেতন চোখে পড়ল। ছাতিমতলা ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে ডানদিক বাঁক নিতে পথে দেখা গেল গেরুয়া বসনধারী বাউলদের। কেউবা হেঁটে, কেউবা সাইকেলে চলেছেন মেলার পানে।
ঝিরঝির করে বইছে খোয়াই। ব্রিজ ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম। দিকে দিকে গাছের ছায়ায় সোনাঝুরির দোকানগুলো তখন সবে বসতে শুরু করেছে।
ফেসবুকের দৌলতে আগেই জেনে গিয়েছিলাম শকুন্তলা লজের কথা, খালি পেলে উঠব ওখানেই। সাড়ে তিনটার পর থেকে বাউল গান শুরু হবে।
কিছুটা এগুতেই আধভাঙ্গা খেজুর গাছে হোর্ডিং দেখা গেল। বনের ভেতর দেখা গেল কিছু সাজানো বাড়ি। ঢালু লাল পথ দিয়ে কোনক্রমে নেমে পৌঁছে গেলাম শকুন্তলা রিসর্ট। নাহ, কোনও রুম খালি নেই। পাশের রিসর্ট “বাউল হাট”। সেখানে মিলে গেল আমদের ছিমছাম AC রুম। আহ, কি শান্তি, দু-পা ফেললেই সোনাঝুরি!
চার:
(সোনাঝুরির হাটে)
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফ্রি হয়ে লাঞ্চে গেলাম সকলে। অর্ডারে ছিল সাধরন নিরামিষ খাবার, অতি সুস্বাদু। লাঞ্চ সেরে অল্প গড়িয়ে নিতে সাড়ে তিনটে বাজল। এবার পা বাড়ালাম হাটের পানে।
রকমারি দোকান ও মানুষের ঢল নেমেছে তখন। ভেসে আসছে বাউলা গান আর আদিবাসী নাচের ধামসা মাদলের মিশ্রিত শব্দ। দোকানে কোথাও বিক্রি হচ্ছে একতারা ও নানান বাঁশের বাঁশি, কোথাও আদিবাসী মালা, দুল, কোথাও শান্তিনিকেতনী ব্যাগ, বাংলা হরফে ছাপানো জামাকাপড়, কোথাও অনান্য দ্রব্যের সঙ্গে দিব্যি খাপখাইয়ে নানান পিঠে ও পাটিসাপটা। তবে সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন প্রাণের রবিঠাকুর।
কিছুটা এগুতেই কানে এল বাউলের গান –“যেমন নাচেন নাগর কানাই তেমনি নাচেন রাই..”
কাছে যেতে দেখি শহুরে সুন্দরীরা দিব্যি নাচ জমিয়েছেন বাউলা গানের তালে। সেখানে কয়েকটা গান শুনে এগিয়ে গেলাম অন্য বাউলের উদ্দেশ্যে। এখানে দুটো গান, ওখানে তিনটে এভাবেই চলল বেশ কিছুক্ষণ।
বাউলদের মতই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দল করে বিভিন্ন সাজে আদিবাসীরা। পুরুষদের হাতে বাদ্যযন্ত্র। তার তালে তালে নেচে চলেছেন তারা। শহুরে মানুষরা শখ মেটাতে তাদের মাঝখানে কোমর দোলাচ্ছেন।
ব্যচেলর ট্যাগ নিয়েছি ঠিক আছে কিন্তু বাড়ির জন্য কিছু না নিয়ে গেলে এই ট্যাগ চিরদিনের জন্য হারানোর ভয়! তাই আনাড়ির দল নামলো দরদামে। হাটের জিনিসপত্রর আকাশছোঁয়া দাম শুনে সবাই ততক্ষণে বুঝে গেছি, হাট ভাঙ্গার আগে কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ!
গরমটা আর নেয়া যাচ্ছে না। রুমে ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার যখন বেরিয়ে এলাম সূর্যদেব পাটে গেছেন, সন্ধ্যা নেমেছে, কমেছে জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দরটাও।
ঝটপট কয়েকটা জিনিস কিনে ফেললাম সকলে।
ক্রমে হাট উঠে গেল, ভেঙ্গে গেল মেলা। রিসর্টের বাঁধা বাউলেরা তখনো উঠোনে গেয়ে চলেছে “খাঁচার ভীতর অচিন পাখি কেমনে..”।
তাদের ঘিরে গোল করে টুলের উপরে বসে লোকজন। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে ঢুকে পড়লাম রিসর্টে।
পাঁচ:
(বইছে কোপাই)
—————————-
মশার কয়েল রাত্রে কাজ করেনি। কয়েকঘণ্টা ঘুমিয়েই সবাই জেগে পড়েছে। শুভদীপের গিন্নির লিস্টিতে খুঁজে পাওয়া মশার কয়েলটা জ্বালিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমোলাম। কোপাই-কে প্রাণভরে দেখা তখনও বাকী। তাই সাতটার মধ্যে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম কঙ্কালীতলার উদ্দেশ্যে।
কঙ্কালীতলা সতীর একান্ন পিঠের একটি। দক্ষযজ্ঞের সময় সতীর খন্ড দেহাংশের কাঁখাল অর্থাৎ কোমরের অংশ পতিত হয়-তা থেকেই এই নাম।
রিসর্ট থেকে বেরিয়ে প্রান্তিক স্টেশনের পাশ দিয়ে দুপাশে সাজানো বাড়িঘর, ধানখেত, বটঝুরি (এখানে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বটগাছ কাটেনা) ও সুন্দর পথকে সঙ্গে রেখে আট কিলোমিটার পরেই মিলল আমাদের গন্তব্য।
রাস্তা হতে বামদিকে সাজান গেটের সোজা পথ গিয়ে মিশছে কঙ্কালীতলায়।
সুন্দর একখানি মন্দির। আরতি শুরু হয়েছে সবে। ঘন্টার শব্দ কানে আসছে।
ডান দিকের মাঠের সামনেই বট গাছ ও অল্পদূরে শিবমন্দির। এই মাঠেই বসে কঙ্কালীতলার মেলা। এখানেও বসেন বাউলরা।
মন্দিরের পিছনে নিস্তব্ধতার সাক্ষী নিয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় গাছের বন। ঠিক যেন শান্তির নীড়, বড়ই স্বস্তিদায়ক। পিছনে আর একটু দূরে এগুলেই তিরতির করে বইছে কোপাই।
কঙ্কালীতলার পাট চুকিয়ে সামনের দোকানে ফুটন্ত তেল থেকে তোলা আটটা চপ নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম সকলে। এবার গন্তব্য কোপাই গ্রাম ও ভিউপয়েন্ট। রিসোর্টের সামনের চৌমাথায় ডান দিকে কয়েক কিলোমিটার গেলেই কোপাই ভিউপয়েন্ট। এঁকেবেঁকে ক্ষীণ স্রোতে এগিয়ে চলেছে সে। তার পাড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ট্রাক। দিব্যি ট্রাকে বালি তুলছে লোকেরা!
কোপাই ব্রিজের সামনে একটি বটগাছ। নিচে চায়ের দোকান। পাশে রঙিন প্লাষ্টিকের ছাউনির নিচে বসে বাউল ও তার সঙ্গীরা।
এ নির্জন কোপাই পাড়ে বাউল শুনতে পাব ভাবতেই পারিনি। আনন্দের শিহরণ বয়ে গেল মনের ওপর দিয়ে। বাউলদের জন্য চায়ের ওর্ডার দিয়ে জমিয়ে বসলাম সকলে। গানগুলো বড্ড ভাবিয়ে দিয়ে গেল আমাদের। স্বর্ণালী সকালটা আরও মধুর হয়ে উঠল।
ছয়:
(প্রাণের ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন)
—————————————————
রিসর্টে বেলা ১১ টায় চেক আউট। অগত্যা বাউল ছেড়ে কোপাই পাড় থেকে ফিরে এলাম। স্নান সেরে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্যে।
বিশ্বভারতী গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ল ছোট রবীন্দ্র মিউজিয়াম (মেনটা একটু এগিয়ে ডানদিকে), আম্রকুঞ্জ, ছাতিমতলা, নাচমন্দির, কলাভবন, খেলার মাঠ।
সত্যই শান্তিনিকেতন। সৌন্দর্যায়ন ছাড়া বড় বড় গাছ। গাছের তলায় বেদী। ছেলেপুলেরা নিজের মত সেখানে বসে। সত্যি গাছেরা মানুষের মন ভাল করে দিতে পারে।
অন্য গাইডের মুখ থেকে ভেসে এল –আম্রকুঞ্জের কোন গাছ নষ্ট হলে সঙ্গেসঙ্গেই আর একটা আম গাছ লাগানো হয়।ভাবলাম হায়, মানুষ রবীন্দ্রকাব্য পড়ুক বা নাই পড়ুক বেড়াতে এসে এটুকুও যদি মানুষজনে শিখে যেত!
এখান থেকে বেরিয়ে আমদের পরবর্তী গন্তব্য রবীন্দ্র মিউজিয়াম। সবশেষে সময় হলে দেখে নেব মডেল ভিলেজ শ্রীনিকেতন ও ডিয়ারপার্ক। যদিও সেটা সম্ভব হবে না বলেই আমদের ধারণা। তখন দুপুর একটা বাজতে মিনিট পাঁচেক বাকি।দুপুর একটা থেকে দুটো লাঞ্চ আওয়ার। মিউজিয়ামে ঢোকা নিষেধ। তাই সময় বাঁচাতে লাঞ্চ সেরে নেয়া হবে ঠিক হল। এগিয়ে গেলাম ভালো রেষ্টুরেন্টের খোঁজে। “ঘরে বাইরে” তে উঠলাম। খুব ভালো খাবার কিন্তু দামটা বেশ চাপা।
দুটোর মধ্যে ফিরে এলাম রবীন্দ্র মিউজিয়ামে। ৪০ টাকা জনপ্রতি টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত মিউজিয়ামে। প্রাণ ভরে গেল দেখে। একটা মানুষ একজীবনে কী করতে পারে রবি ঠাকুরই তার প্রমাণ।ভেতরে মন উথালপাথাল করে হাল্কা সুরে বাজছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। একে একে দেখে নিলাম রবি ঠাকুরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া অসংখ্য উপহার, শংসাপত্র, বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত গীতাঞ্জলীর অনুবাদ, বিভিন্ন ছবি ও শিল্পকলা এবং সর্বোপরি নোবেলের প্রতিরূপ।
ঠিক ছিল সাড়ে তিনটার মধ্যে বেরিয়ে যাব। তা না হলে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।
মিউজিয়াম দেখার অতৃপ্তি আর নোবেল চুরির গনগনে রাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এনার নোবেলটাই কিনা আমরা রাখতে পরলাম না? ধিক বাঙালি ধিক!
পরের বার মিউজিয়ামের জন্য তিনঘন্টা বরাদ্দ রাখলাম। পথে যেতে যেতে আগেই দেখে নিয়েছি অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতিচি। দেখা হল না মডেল ভিলেজ শ্রীনীকেতন, ডিয়ার পার্ক। এত শুনেও মন ভরল না বাউল গানে।
তাতে কি? সব পেলে নাকি নষ্ট জীবন! থাক না কিছু বাকী। এসি অন করে গাড়িতে চড়ে বসলাম সকলে। এবার বেজে উঠল-“আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তাই সকল খানে..”।
sandiplayek@gmail.com
কিছু দরকারি তথ্য
১. দুর্গাপুর সিটিসেন্টার বা ধর্মতলা বাসে সরাসরি শান্তিনিকেতন। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনেও সরাসরি চলে আসতে পারেন বোলপুর।
২. ওখান থেকে টোটো বা গাড়ি নিয়ে সোনাঝুরির রিসর্টে বা শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি বা বোলপুরের রিসর্ট বা হোটেলে উঠুন।
৩. শনিবার ধরে আসুন। সোনাঝুরির হাট শুধু শনিবার বসে।
৪. বাউল গান হয় সোনাঝুরির হাট বা কঙ্কালীতলা মাঠে। রিসর্ট থেকেও বাউল ভাড়ায় পাওয়া যায়।
৫. হাতে রাখুন কমপক্ষে দুটো দিন একটা রাত
(sandiplayek@gmail.com)