বাইচুং এখনও দুরন্ত স্ট্রাইকার, ঠিক গোলের গন্ধ পেয়েছেন

বলা হয়, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। কিন্তু বাইচুং ভুটিয়া একটু অন্য ধাতুতে গড়া। তাঁর ফর্ম, ক্লাস দুটোই পার্মানেন্ট। সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকার, ঠিক গোলের গন্ধ পেয়েছেন। তাঁকে খোলা চিঠি। লিখলেন রাহুল বিশ্বাস।।

 

গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আপনার তৃণমূল ত্যাগের খবর খেলার পাতার বদলে ভেতরের পাতায় স্থান পেয়েছে। যে সাংবাদিকরা এই কাজ করেছে, যারা এটিকে নিছক রাজনীতির খবর বলে ভেবেছে, যারা এটিকে খেলার খবর বলে ভাবেনি, তারা সাংবাদিক নামের অযোগ্য। খেলা ছাড়ার এতদিন পরেও এই ফর্ম ধরে রাখা কতবড় কীর্তি, সে ধারনা তাঁদের নেই। যে ফর্ম ধরে রাখার জন্য বর্তমান খেলোয়াড়েরা হিমশিম খায়, প্রাক্তন হয়েও সেই ফর্মকে আপনি পোষা গোলাম করে রেখেছেন।
যাঁরা ভাবছেন, আপনার তৃণমূল ত্যাগের সঙ্গে খেলোয়াড়ি ফর্মের কী সম্পর্ক, তাঁরা আপনার খেলোয়াড়ি জীবন সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

baichung6
খেলোয়াড় জীবনে আপনি স্ট্রাইকার ছিলেন। স্ট্রাইকার মানে যে আঘাত করে। বিপক্ষের দুর্গে আঘাত করে। কিন্তু আপনি এতবড় স্ট্রাইকার, যে মাঝে মাঝেই বিপক্ষের পাশাপাশি নিজের দুর্গেও আঘাত করতেন। ইস্টবেঙ্গল আপনাকে ঘরের ছেলে ভেবেছিল। আপনি তাদের আঘাত করে মোহনবাগানে চলে গেলেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ক্লাব তাঁবু থেকে আপনার ছবি সরিয়ে অক্ষম রাগ প্রকাশ করল।
মোহনবাগানে গিয়ে আপনি খেলা ছেড়ে নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেন। ফলস্বরূপ, মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন না হয়ে রানার্স হয়েছিল। রাগে গজগজ করতে করতে মোহনবাগান কর্তারা আপনাকে শোকজ করল। তখন আবার আপনি ইস্টবেঙ্গলকে মাদার ক্লাব বলে ডাকলেন।
দলবদল অনেকেই করে। সমর্থকদের গালাগাল অনেকেই খায়। কিন্তু আপনার মতো কারও বিরুদ্ধেই বেইমানির অভিযোগ ওঠে না। অনেক প্রাক্তন খেলোয়াড়ই মোহনবাগান–‌ইস্টবেঙ্গলের সমালোচনা করে। কিন্তু কেউই সরাসরি বলেন না, দুই বড় ক্লাবের পরিকাঠামো নেই, তাই এদের আই এস এলে খেলতে দেওয়া উচিত নয়।
এই দলবদলের ধারাবাহিকতা, বিশ্বাসভঙ্গের ধারাবাহিকতা আপনার মতো আর কোনও খেলোয়াড়ের নেই। কথায় বলে, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। আপনার ফর্ম এবং ক্লাস দুটোই পার্মানেন্ট। তাই রাজনীতিতে এসেও আপনি কখনও অশোক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ, কখনও মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ, কখনও বিমল গুরুংয়ের ঘনিষ্ঠ.‌.‌.‌এখন না জানি কার ঘনিষ্ঠ.‌.‌.‌
আসলে আপনি সুযোগের ঘনিষ্ঠ। স্ট্রাইকার মাত্রই সুযোগ সন্ধানী। আপনি একজন যথার্থ স্ট্রাইকার। তাই খেলা ছাড়ার পরেও আপনার সুযোগ সন্ধানী প্রবৃত্তি যায়নি। বরাবর সুযোগ বুঝে ক্লাব বদলেছেন, দল বদলেছেন। কারণ, আপনার ফর্ম পার্মানেন্ট।

আপনি কখনও মাঝমাঠে নেমে খেলা তৈরি করেননি। পেনাল্টি বক্সের ভেতরেই ঘোরাফেরা করেছেন। মাঠের বাইরেও বাংলা অথবা সিকিমের ফুটবলের জন। কিচ্ছু করেননি। সিকিমে একটা ক্লাব গড়েছিলেন। সেই ক্লাব হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এখন আপনি বলছেন, মোহন–‌ইস্টের পরিকাঠামো নেই। আপনার নিজের ক্লাবে আপনি নিজে কেন পরিকাঠামো বানালেন না?‌ বানাননি, কারণ আপনি তো মাঝমাঠে নেমে খেলা তৈরি করেন না। আপনি পেনাল্টি বক্সের সুযোগ সন্ধানী খেলোয়াড়। আপনার ফর্ম পার্মানেন্ট।

baichung

আপনি খেলোয়াড়দের সংগঠন তৈরি করলেন। তাতে খেলোয়াড়দের কী উপকার হল, ভগবান জানে। কিন্তু আপনি ফেডারেশনের সভায় নাক গলানোর সুযোগ পেলেন। এবং খেলোয়াড় বা ক্লাবের বদলে ফেডারেশন কর্তাদের স্বার্থ দেখতে লাগলেন। রাজনীতিতেও আপনি জীবনে একটা পোস্টারও না লাগিয়ে লোকসভা ও বিধানসভার টিকিট পেলেন। এবং দুবারই হারলেন। দায়বদ্ধতার নামগন্ধ থাকলে এরপর মাঝমাঠে নেমে খেলা তৈরি করতেন। মানে, দলীয় কাজে মনোনিবেশ করতেন। কিন্তু আপনার ফর্ম পার্মানেন্ট, এককালে বুঝেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের বদলে মোহনবাগানে খেললে পাশে ব্যারেটোকে পাওয়া যাবে। সাফল্যের সুযোগ বেশি। এবারেও বুঝলেন দার্জিলিংয়ে দার্জিলিংয়ে রাজনীতি করতে হলে মমতার থেকে গুরুংকে পাশে পাওয়া বেশি জরুরি। তাই তৃণমূলের সদস্য হয়েও গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করলেন। এখন যখন দেখলেন গুরুং কোণঠাসা, মমতাও আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, অশোক ভট্টাচার্যর কাছে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই নেই, তখন তল্পিতল্পা গুটিয়ে চললেন.‌.‌.‌
কোথায় চললেন, তা ভগবানই জানেন। তবে এটুকু বলতে পারি, ফুটবল সংক্রান্ত কোনও কাজ করবেন না। আরও বলতে পারি, কোনও একটা সুযোগের সন্ধান আপনি পেয়েছেন। কারণ, আপনি বরাবরই সুযোগ সন্ধানী। আর আপনার ফর্ম এবং ক্লাস দুটোই পার্মানেন্ট।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.