( শ্রীদেবীর জন্মদিনে বেঙ্গল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল একটি বিশেষ লেখা। লিখেছিলেন ময়ূখ নস্কর।। কৈশোরের আবেগ ও মুগ্ধতা ঝরে পড়েছিল সেই লেখায়। হৃদয়ে ঝড় তোলা সেই অভিনেত্রীর আকস্মিক প্রয়াণে সেই লেখা ফিরিয়ে আনা হল। )
বছর কয়েক আগে হিম্মতওয়ালা নামে একটা হিন্দি সিনেমা হয়েছিল। সুপারফ্লপ সেই সিনেমা নিয়ে আলোচনা করা না করা সমান। কিন্তু সিনেমাটার নাম আমার মনে আছে একটাই কারণে, সেটা হল পরিচালকের হিম্মত। আসলে সিনেমাটা ১৯৮৩-র হিম্মতওয়ালা সিনেমার রিমেক। মূল সিনেমাটায় নায়িকা ছিলেন শ্রীদেবী। আর রিমেকে নায়িকা ছিলেন তমান্না ভাটিয়া। অসম্ভব হিম্মত না থাকলে শ্রীদেবীর জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে হিম্মতওয়ালা বানানো যায় না। অবশ্য পরিচালকে দোষ দিয়েই বা কী করব? যা দিনকাল পড়েছে, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা তন্নতন্ন করে খুঁজলেও শ্রীদেবীর বিকল্প তিনি পাবেন কোথায়?
সে এক যুগ ছিল বটে। তখন ভারতীয় সিনেমার নায়িকারা পাশ্চাত্যের নকল করে ফিগার বানাতে শেখেননি। তাঁদের সৌন্দর্য ছিল ভারতীয় পুরাণের অপ্সরাদের মতো। মনে হত, তাঁরা উঠে এসেছেন খাজুরাহো, কোনারকের মন্দির গাত্র থেকে। তাঁদের শরীর শুধু যৌনতার সুবাস ছড়াত না, সেই শরীরে যৌবনও ছিল। ভরাট যৌবন।
সেই আদি অকৃত্রিম ভারতীয় যৌবনবতীদের সেরা প্রতীক ছিলেন শ্রীদেবী। কাশ্মীরি তুরঙ্গীর ন্যায় তাঁর ক্ষীণ কটি, গজগামিনীর ন্যায় গুরু নিতম্ব, বক্ষে যুগল জম্বুরা, মরালীর ন্যায় চলন। প্রতিটি বক্রতায় ছিল ভারতীয়তা। বাৎস্যায়নের ভারত, মৃচ্ছকটিকমের ভারত, কুমারসম্ভবমের ভারত, খাজুরাহোর ভারত।
আশির দশকের ভারত তখনও স্বপ্নে আঞ্জেলিনা জোলিদের দেখতে শেখেনি। ভারতীয় যুব সমাজের চৈতালি রাতের স্বপ্নে তখনও আদর্শ সুন্দরী মানে মধুবালা, বৈজয়ন্তীমালার মতো প্রাক্তন। আর বর্তমান জুড়ে ছিল শ্রী দেবী। তখনও পর্ন সাইট ছিল না। ইন্টারনেট শব্দটাই তখনও ডিকশেনারিতে জায়গা পায়নি। আনন্দলোকের রঙ্গিন ছবিই সেই নিষিদ্ধ আনন্দের জোগান দিত। কিন্তু সেই আনন্দ দেওয়ার জন্য নায়িকাদের খাটো পোশাক পরতে হয়নি। কারণ, ওই যে বলেছি, তাঁদের শরীরে যৌবন ছিল। তাঁরা সাইজ জিরো ছিলেন না, ছিলেন স্তোকনম্রা স্তনাভ্যাং। (স্তোকনম্রা মানে যে নারী সামান্য ঝুঁকে থাকে। পুরো মানেটা একটু কষ্ট করে বুঝে নিন।)
এই যুগের শেষ প্রতিনিধি ছিলেন শ্রীদেবী। মাধুরী, মীনাক্ষী, মনীষাদের সময় থেকেই নায়িকাদের মধ্যে সেই কালিদাসের কাব্যের নারীদের মতো রুপ কমতে শুরু করেছিল, কিন্তু যা ছিল সেটাও কম নয়। সেটাও ভারতীয় সৌন্দর্যই ছিল। কিন্তু করিশমা কাপুর, ঊর্মিলা মাতণ্ডকরদের সময় থেকে যে সব নায়িকারা আসতে শুরু করলেন, তাঁরা আর যাই হোক রুপে ভারতীয় নন। অনায়াসে তাঁদের আমেরিকান বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। এবং তাঁরা পোশাক পরছেন আমেরিকানদের মতই। শ্রীদেবী, মাধুরীদের আপাদমস্তক ঢাকা থাকলেও রূপযৌবনকে আটকান যেত না। কারণ সেই রুপ ছিল উদ্দাম বন্যার মতো। পোশাকের বাঁধে তাকে আটকানো অসম্ভব।
শ্রী দেবী মাধুরীরা রুপালি পর্দা থেকে সরে গেলেন, আর বাৎস্যায়নের দেশে জিরো ফিগারের চল শুরু হল। এই নায়িকাদের দেখে যারা মুগ্ধ হন, তাঁদের অধিকাংশই কিশোর বা নবযুবক, তারা কি জানবে আজ থেকে ৩০ বছর আগে শ্রীদেবীর রূপ কী ছিল!