সুখরঞ্জন মজুমদার
কোনও একটা ধর্মীয় সমাবেশ হলেই শহরজুড়ে অশান্তির আবহ। এমনকি তা পার্শ্বর্তী জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক বছরে বারবার এই দৃশ্য দেখা গেছে। ফের দেখা গেল বুধবার।
এরা কজন ধর্ম বোঝেন, সন্দেহ আছে। যাঁরা হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়াচ্ছেন, তাঁদের দু লাইন সংস্কৃত জিজ্ঞেস করুন। রামায়ন বা মহাভারত থেকে নিরীহ দু একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন, তাহলেই বোঝা যাবে এদের বিদ্যের দৌড় কতদূর। উল্টোটাও সত্যি। মুসলিম সমাবেশে যাঁরা হাজির হন, তাঁদের অধিকাংশই নিজের ধর্মটা ঠিকঠাক বোঝেন না।
ধর্মীয় সমাবেশ মানে কী? নিজের ধর্ম নিয়ে এদের তেমন মাথা ব্যথা নেই। অন্য ধর্মের নামে গাল পাড়া, আর ঘৃণা ছড়ানোই যেন একমাত্র লক্ষ্য। এই জায়গায় ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে তপন ঘোষদের বিশেষ ফারাক নেই।
নিজেদের জাতির জন্য, নিজেদের ধর্মের জন্য এঁরা কী করেছেন? যখন বন্যায় ভেসে যায়, কই তখন তো এঁদের দেখা যায় না। নিজের নিজের ধর্মের কজন দুঃস্থ রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছেন? কজনকে রক্ত দিয়েছেন? কজন মেধাবী ছাত্রের লড়াইয়ের পাশে থেকেছেন? শুধু উস্কানি দেওয়া ছাড়া আর কোনও কাজই নেই। শিখুন রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রমকে দেখে। শিখুন আল আমিন মিশনকে দেখে। এঁরা মানুষের জন্য কাজ করে। মানুষের পাশে থাকে। কিন্তু মুশকিলটা হল, প্রশাসনের কাছে এই মৌলবাদীদের গুরুত্বই বেশি। তাঁরা মুসলিম বলতে হোসেনুর রহমান বা মীরাতুন নাহার বা নজরুল ইসলামকে বোঝে না। এঁরা মুসলিম বলতে বোঝে ত্বহা সিদ্দিকি বা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিদের। সেই কারণেই এঁরা উস্কানি ছড়ানোর এত মদত পেয়ে যায়। এঁরা জানে, যা খুশি করে পার পাওয়া যায়। এঁরা জানে, সরকার অনাথ আশ্রম ভেঙে দিতে পারে, স্কুল ভেঙে দিতে পারে, কিন্তু মন্দির বা মসজিদে হাত দিতে ভয় পায়।
প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, ধর্মতলায় এঁদের সমাবেশ করার অনুমতি যেন না দেওয়া হয়। কারণ, এঁরা কোনও দায়িত্বশীল সংগঠন নয়। এঁদের গঠনমূলক ভূমিকা নেই। শুধু হিংসা আর ঘৃণাই এদের ভিত্তি। এঁদের যদি সমাবেশ করতেই হয়, শহরের বাইরে, ধাপার মাঠে করুক।
(এটি ওপেন ফোরামের লেখা। বেঙ্গল টাইমসের ওপেন ফোরাম পাঠকের মুক্তমঞ্চ। যে কোনও সুস্থ বিতর্ক এখানে স্বাগত। আপনিও মতামত জানাতে পারেন। )