বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন
একটি ট্রেন। তাকে নিয়ে এত কাণ্ড ঘটে গেল। দুই শহরে প্রায় ঝগড়াই লেগে গিয়েছিল। যাক, অবশেষে নিষ্পত্তি। দার্জিলিং মেল ছাড়বে এনজেপি থেকেই। জানিয়ে দিন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল।
কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল, এপ্রিল থেকে সেটি যাবে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত। সেখান থেকেই ছাড়বে। ডুয়ার্সে স্বাভাবিকভাবেই খুশির বার্তা ছড়িয়েছিল। যাঁরা ডুয়ার্সে বেড়াতে যেতে চান, তাঁদের কাছেও এটা ছিল স্বস্তির বার্তা।
কিন্তু মুদ্রার অন্য একটা পিঠও ছিল। পাহাড় ও শিলিগুড়িবাসীর দাবি ছিল এটি ঐতিহ্য মেনে এনজেপি থেকেই ছাড়ুক। আলিপুরদুয়ার থেকে ছাড়া হলে নানা সমস্যা দেখা দেবে।
এটি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল মূলত বামেরা। অশোক ভট্টাচার্য স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, তাঁরা চান শিলিগুড়ি থেকেই (এনজেপি) দার্জিলিং মেল ছাড়া হোক। এই মর্মে রেলের কাছে দাবিও জানিয়েছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল ১) উত্তরবঙ্গ থেকে শিয়ালদা যাওয়ার এই একটিমাত্র ট্রেনই এনজেপি থেকে ছাড়ে। সেটিকে কেন সরিয়ে দেওয়া হবে? ২) এই ট্রেন আলিপুরদুয়ার গেলে, সেখানে মাত্র দু–তিন ঘণ্টা পরেই আবার ছাড়তে হবে। একটি সুপারফাস্ট ট্রেনের ক্ষেত্রে এটি একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। ৩) আলিপুরদুয়ার থেকে সিঙ্গল লাইন। ফলে, অধিকাংশ দিনই ট্রেন দেরিতে আসবে। ফলে, কলকাতাতেও দেরিতে পৌঁছবে। লেট হওয়াটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে। যে ট্রেন লেট না করার জন্য এত সুনাম অর্জন করেছে, তাকে জেনেশুনে এমন খারাপ পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে কেন? ৪) ব্রিটিশরা এই ট্রেন চালু করেছিল। এই ট্রেনে রবীন্দ্রনাথ থেকে গান্ধীজি, দেশবন্ধু থেকে নেতাজিরা এসেছেন। এর সঙ্গে দার্জিলিংয়ের নাম ও আবেগ জড়িয়ে আছে। এটাকে জোর করে আলিপুরদুয়ার কেন পাঠানো হবে? ৫) আলিপুরদুয়ার থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য দরকার হলে আরও একটি ট্রেন বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এই ট্রেনকে আলিপুরদুয়ার নিয়ে গেলে সমস্যা বাড়বে।
এই যুক্তিগুলি রেল কর্তাদের গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, দার্জিলিং মেল এনজেপি থেকেই ছাড়বে। একদিকে অশোক ভট্টাচার্যরা স্পষ্ট অবস্থান নিলেন। অন্যদিকে শিলিগুড়ির মন্ত্রী গৌতম দেবরা ভুগলেন দোলাচলে। কোথা থেকে এই ট্রেন ছাড়া উচিত, তাঁরা এই নিয়ে বেশ দ্বিধায় ভুগলেন। সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে কিছুটা হলেও ফল পাওয়া যায়, আবার দেখিয়ে দিলেন অশোক ভট্টাচার্য।
(এই বিষয়ে আপনিও আপনার মতামত জানাতে পারেন। পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)