সুজয় হালদার
রোজ শিরোনামে ভারতী ঘোষ। এই বইমেলার বাজারেও, মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের সময়েও প্রথম পাতায় রোজ ভারতী ঘোষ। আজ তাঁর বাড়ি থেকে এই উদ্ধার হচ্ছে। কাল ওই উদ্ধার হচ্ছে। কী কী অপকর্ম করেছেন, তার নতুন নতুন ফিরিস্তি বেরিয়ে আসছে। ওমুক থানায় ডায়েরি হচ্ছে, তমুক জায়গায় অভিযোগ জমা হচ্ছে।
এসব কোনওকিছুই কি হত যদি ভারতী মাথা নিচু করে তাঁর বদলি মেনে নিতেন? সমস্যাটা কোথায়? ভারতী ঘোষকে সরকার বদলি করল। করতেই পারে। সারা বছর এমন কত অফিসারের বদলি হয়। কত ভাল অফিসারকে গুরুত্বহীন জায়গায় পাঠানো হয়। ভারতীও চুপচাপ বদলির আদেশ মেনে নিয়ে ব্যারাকপুরে গিয়ে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করে বসলেন।

ব্যাস, এখানেই যেন আগুনে ঘি পড়ল। পদত্যাগ করেছেন মানে বাইরে অনেক কিছু বলে ফেলতে পারেন। সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতে পারেন। কারণ, ভারতী নিজে যেমন অনেক অপকর্ম করেছেন, তেমনি অনেক অপকর্মের সাক্ষীও আছেন। কার অনুপ্রেরণায়, কার নির্দেশে এসব করেছেন, বলেও ফেলতে পারেন। অতএব, যেমন করে হোক, তাঁকে জব্দ করতে হবে। যেন আর মুখ খুলতে না পারে। কী জানি, এরপর হয়ত তাঁকে জেলেও ভরা হবে।
ভারতীর নামে যেসব কাণ্ড বেরিয়ে এসেছে, এগুলো কি পুলিশের ওপর তলার কর্তারা জানতেন না? তাহলে এত দিন নীরব ছিলেন কেন? ভারতী যদি পদত্যাগ না করতেন, তাহলে পুলিশের সাহস হত তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর? পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও ব্যবসায়ীর সাহস হত থানায় গিয়ে তাঁর নামে নালিশ জানানোর?
এই যে তল্লাশি, এটা পুলিশ বা সিআইডি–র লোকেরা কোনও নির্দেশ ছাড়াই চালাচ্ছে, এটা বিশ্বাস হয়? এতখানি স্বাধীনতা পুলিশের আছে? এতখানি মেরুদণ্ড পুলিশের আছে? বিশেষ একজনের নির্দেশ ছাড়া এটা হতে পারে না। আর এটা বোঝার জন্য কোনও বুদ্ধি না থাকলেও চলে। পুলিশ যে কতটা নিচে নামতে পারে, আরও একবার বোঝা গেল।
এত বছর ধরে ভারতী ঘোষ এই সমস্ত কাণ্ড চালিয়ে গেলেন। তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা এতদিন কী করছিলেন? কার সাহসে, কার ‘অনুপ্রেরণা’য় এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলেন? তাঁদের দিকে কোনও প্রশ্ন উঠবে না?

