বিমল গুরুংকে খোলা চিঠি

আপনি বুঝেছেন। ভারতী ঘোষ বুঝেছেন। একদিন বিনয় তামাংরাও বুঝবেন। আপাতত সেই অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় কী?‌ টিভিতে চোখ রাখুন। পাহাড়ে ‘‌উন্নয়ন’‌ আর ‘‌অনুপ্রেরণা’‌র লাইভ টেলিকাস্ট দেখুন। বিমল গুরুংকে খোলা চিঠি। লিখেছেন রক্তিম মিত্র।।

আপনি কোথায়, কে জানে!‌ শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি দিল্লিতে। এদিকে আজ পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং, একটু দূরে দূরেই সাজানো হয়েছে বিশাল তোরণ। সব তোরণে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। আর আপনি!‌ একসময় পাহাড়ের একচ্ছত্র সম্রাট, আজ কোথায় লুকিয়ে আছেন!‌

দিল্লিতে থাকলেও বাংলার খবর নিশ্চয় পাচ্ছেন। ভারতী ঘোষের বাড়িতে তল্লাশির খবর নিশ্চয় নজর এড়ায়নি। আপনার সঙ্গে তাঁর কত মিল। আপনি যেমন পাহাড়ে রাজত্ব করতেন, এই মহিলাও মেদিনীপুর জেলায় ছড়ি ঘোরাতেন। আপনি যেমন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘‌পাহাড়ের মা’‌ বলেছিলেন, এই মহিলাও তেমনি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘‌জঙ্গল মহলের মা’‌ বলেছিলেন।

khola chithi image

পাহাড় আর জঙ্গল মহল— এই দুটোই ছিল শান্তির সেরা বিজ্ঞাপন। দুই প্রান্তের দুই কৃতী সন্তানের কী দুর্দশা। আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ বাহিনী। অন্যদিকে ভারতীর পেছনেও আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছে সিআইডি। আপনাকে খুনি বানানো হয়েছে। তাঁর গায়েও অনেক অপরাধের তকমা লাগানোর চেষ্টা চলছে।

আরও একটা ব্যাপারে দুজনের মিল আছে। আপনি ভেবেছিলেন, বিজেপি পাশে থাকবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কী দেখলেন?‌ তেমনভাবে পাশে নেই। কারণ, আপনার পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তাঁরা দিদিমণিকে চটাতে চাইবেন না। ভারতী ঘোষের পক্ষে এখন বিজেপি যতই বিবৃতি দিক। নিশ্চিত থাকুন, ভারতীও বিজেপি–‌র তেমন আনুকূল্য পাবেন না। কারণ, মোদিবাবুরা বোঝেন, কুড়ি–‌তিরিশ খানা আসন দরকার হলে তা কংগ্রেস বা বামেদের দিক থেকে আসবে না। কোথা থেকে আসবে, কে আসল বন্ধু, তাঁরা ভাল বোঝেন। সেই দরজা খুলেই রাখতে চাইবেন।

যাক সে কথা। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে। উৎসব উৎসব ভাব। সেখানে আপনিই নেই। নিশ্চয় টিভির পর্দায় সারাদিন চোখ রাখবেন। একসময় যাঁরা আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করত, মুখ তুলে কথা বলতে পারত না, সেই বিনয় তামাং–‌অনীত থাপারা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। হয়ত মা বলবেন। উন্নয়নের কান্ডারি বলবেন। আপনার নামে কত গাল পাড়া হবে। ভাবতে পারছেন, পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আপনার বাপবাপান্ত করা হবে!‌ এক বছর আগেও এমনটা ভাবতে পেরেছিলেন!‌

gurung

জিটিএ তে নির্বাচনই হতে দেননি। পাহাড়ের মানুষের মনোভাব যাচাই করার চেষ্টাই করেননি। গাজোয়ারি করেই থেকে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না। যায়, এমনি করে কিছুদিনই যায়। তারপর সেই পরিণতিই হয়, যা আপনার হয়েছে। আজ যে বিনয় তামাংদের মাথায় তুলে নাচা হচ্ছে, তাঁরাও নির্বাচিত হয়ে আসেননি। সরকারের আনুকূল্যেই এসেছেন। তাঁরাও যে দারুণ উন্নয়নকামী, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। দুর্নীতি, তোলাবাজি চলবে। হয়ত আপনার মতো সেই দাপট তাঁদের থাকবে না (‌কারণ, তাঁদের টিঁকি অন্য কোথাও বাঁধা)‌, কিন্তু তাঁরাও কদিন পরেই পাহাড়ে রাজত্ব চালাতে চাইবেন। ফের উঠে আসবে অন্য কোনও মুখ। বারবার এভাবেই টোপ দেওয়া হয়। যে টোপ গিলেছিলেন আপনি। সেই টোপ গিলেছেন তামাংরা।

যদি অশান্ত পাহাড় শান্ত হয়ে ওঠে, মন্দ কী?‌ যদি আবার পর্যটকরা পাহাড়ে যাওয়ার সাহস পায়, ভালই তো। যদি উন্নয়ন হয়, স্বাগত জানাতে দ্বিধা কোথায়?‌ কিন্তু সে ভরসা আর রাখতে পারছি কই?‌ আবার তিনি যাচ্ছেন সেই বিভাজনের বার্তা নিয়েই। পাহাড়ে বশংবদ দুজন দরকার ছিল, পাওয়া গেছে। কিন্তু সব প্রকল্পে, সব উদ্বোধনে, সব হোর্ডিংয়ে আবার তিনিই ফিরে আসবেন। ছোট্ট নর্দমা হলে, সেটাও তিনিই উদ্বোধন করবেন। সেখানেও ‘‌অনুপ্রেরণা’‌র প্রস্তর খোদাই করা থাকবে।

আপনি বুঝেছেন। ভারতী বুঝেছেন। একদিন বিনয় তামাংরাও বুঝবেন। আপাতত সেই অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় কী?‌ টিভিতে চোখ রাখুন। পাহাড়ে ‘‌উন্নয়ন’‌ আর ‘‌অনুপ্রেরণা’‌র লাইভ টেলিকাস্ট দেখুন।

book-banner-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.