নন্দ ঘোষ আবার বইমেলায় হাজির। ফ্রান্সের থিম প্যাভিলিয়নেও পৌঁছে গেলেন। তাঁর ইচ্ছে হল গিল্ডের মহাপন্ডিত মাতব্বর ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়কে একটু প্রেম নিবেদন করবেন। সেই প্রেমপত্র কেমন হতে পারে? পড়ে নিন। জেনে নিন।
নন্দ ঘোষের কড়চা
সেই যে রেজ্জাক মোল্লা বলেছিলেন, “হেলে ধরতে পারে না কেউটে ধরতে গেছে,” কথাটা খাপে খাপে মিলে যায় ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। ত্রিদিব চাটুজ্যে, মানে বইমেলার আয়োজক গিল্ড-এর ত্রিদিববাবু। লোকে বলে তাঁর চরিত্রের সঙ্গে গিরগিটি নামক একটি প্রাণীর মিল আছে। বছর ছয়েক আগেও তিনি ছিলেন টকটকে লাল। আবার এখন কটকটে সবুজ। থুড়ি নীল সাদা।
কিন্তু আমরা ওই সব জটিল রাজনৈতিক বিতর্কে ঢুকতে চাই না। আমাদের আজকের বিষয় হল বইমেলার থিম। আচ্ছা, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে কি চীনের সিনেমা, ইরানের সিনেমা ইত্যাদি থিম থাকে? খাদ্য মেলায় কি মোগলাই খাবার, ইতালিয়ান খাবার ইত্যাদি থিম থাকে? থাকে না। মেলা মানে হরেক জিনিস ছড়িয়ে থাকবে। যার যেটা খুশি কিনবে। মেলার আবার থিম কী হে?
কিন্তু বইমেলায় থিম থাকে। এবং থিমের লিস্টি দেখে মনে হবে, বাংলা ভাষার, ভারতের সব ভাষার সাহিত্য গুলে খাওয়া হয়ে গেছে। তাই বিদেশ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। আচ্ছা বুকে হাত রেখে বলুন তো, আমরা কজন, সতীনাথ ভাদুড়ির লেখা পড়েছি? অদ্বৈত মল্লবর্ধনের লেখা পড়েছি? জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর লেখা পড়েছি? প্রমথনাথ বিশির লেখা পড়েছি? পড়া দূরের কথা, ৯০ শতাংশ বাঙালি এঁদের নাম শোনেনি। সদিচ্ছা থাকলে এঁদের বইমেলার থিম করা যেত। একেক মেলায় একেকজন।
বাঙলার বাইরে বেরতে চাইলে ভারতের কোন রাজ্যকে থিম করা যেত। মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, অসম, ওড়িশা এই সব রাজ্য থিম হলে আমরা অমৃতা প্রীতম সিং, ইন্দিরা গোস্বামী, ফকিরমোহন সেনাপতি, গিরিশ কারনাদ প্রভৃতি সাহিত্যিকদের সম্বন্ধে জানতে পারতাম।
কিন্তু ত্রিদিববাবুরা তো আন্তর্জাতিক বইমেলা করেন। রাজ্য বা দেশ নিয়ে থিম করলে তাঁদের মান–ইজ্জত চলে যাবে। তাছাড়া বিদেশ নিয়ে থিম করলে গিল্ড-এর খরচে সেই দেশটা ঘুরে আসা যায়। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ঘোরা হয়ে গেছে, এখন বাবুরা নজর দিয়েছেন লাতিন আমেরিকার দিকে। পুরুলিয়ার খবর রাখে না, পেরুর গপ্পো ঝাড়ছে। আগেরবারের থিম ছিল কোস্টারিকা। কোস্টারিকায় কি এমন হাতিঘোড়া সাহিত্য হয় জানি না বাপু। এবারের থিম নাকি ফ্রান্স। ভারি আমার ফরাসি পণ্ডিত। যেন ফ্রান্সের সাহিত্য বুঝে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছে। ইচ্ছে করছে ফরাসি ভাষায় গোটা কয়েক গালাগাল শিখে গিল্ডকর্তাদের শোনাতে। দেখি, কেমন বুঝতে পারে।আমি নিশ্চিত ত্রিদিববাবুরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে যেমন দাঁত কেলিয়ে হাসেন, আমার ফরাসি গালাগাল শুনলেও তেমনিই হাসবেন।
(নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। নানা সময় তিনি নানা জায়গায় হাজির হয়ে যান। বাঁকা চোখে, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় তাঁর পাঁচালি লেখেন। এটিকে মজা হিসেবেই দেখতে পারেন। )