একদিকে ঢালাও ফেল, অন্যদিকে ঢালাও গ্রেস

সংকট অনেক গভীরে। সেটা বোঝার মতো সদিচ্ছা বা সময় শিক্ষামন্ত্রীর নেই। ‌যাকে তাকে উপাচার্য বানানো যায় না, ঠিক তেমনি শিক্ষাদপ্তরও যাকে তাকে দেওয়া যায় না। যিনি পাইকারি হারে এত অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন, এই সহজ সত্যিটা তিনি কবে যে বুঝবেন! লিখেছেন রক্তিম মিত্র।।

সত্যিই রেকর্ড করল বটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলায় কিনা ৫৭ শতাংশ ফেল!‌ এত চেষ্টা করেও পাস করানো গেল না!‌ উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ আর কাকে বলে!‌ এবার ফেল করা ছাত্রদের কীভাবে পাস করানো যায়, নানা উপায়ের সন্ধান চলবে।
অন্যদিকে, মালদার গৌড়বঙ্গ। সেখানে আবার ঢালাও গ্রেস নম্বর। খাতায় যা নম্বর, মার্কশিটে তার থেকে ঢের বেশি। ফেল করালে অনেক ঝামেলা। ছাত্ররা রিভিউ করবে, আরটিআই করবে। সবদিক দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম। তার থেকে বাপু ঝেড়ে পাস করিয়ে দাও। যার কুড়ি পাওয়ার কথা, সে যদি চল্লিশ পায়, নিশ্চয় কোর্টে যাবে না। এদিকে, পাসের হার বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবও বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। রায়গঞ্জ তো আরও একধাপ ওপরে। সেখানে বিজ্ঞান বিভাগেও অনার্সে একশো শতাংশ পাস।
পার্ট ওয়ান বা পার্ট টু তে কীভাবে পাস করানো হয়, সে সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর সম্ভবত কোনও ধারনাই নেই। অলিখিত ফতোয়াই থাকে, কুড়ি পেরোলেই তাকে পাস করিয়ে দাও। কী করে তাকে তিরিশ দেবেন, সেটা সেই শিক্ষকের ভাবনা। এক অধ্যাপক বন্ধুর সৌজন্যে কিছু খাতা দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেখানেই দেখেছিলাম, কী ভয়ঙ্কর করুণ অবস্থা। ন্যূনতম বাক্যগঠনটাই অনেকে করতে পারছে না। অন্তত ষাট শতাংশ খাতা দেখে মনে হয়েছে, সিলেবাসে যা আছে, সেগুলো কোনওদিন রিডিংও পড়েনি। বারবার মনে হয়েছে, গ্র‌্যাজুয়েশন বা অনার্স তো দূরের কথা, এদের মাধ্যমিক পাস কে করালো?‌ কিন্তু প্রশ্ন করে লাভ কী?‌ এই ছেলেদের অনার্সেও পাস করাতে হবে, এটাই অলিখিত ফতোয়া।

calcutta university
এবার বোধ হয় সেই ফতোয়া দেওয়ায় কোথাও একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। নইলে এমনটা হবে কেন?‌ রায়গঞ্জের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে একশো শতাংশ (‌তাও আবার সায়েন্সে)‌, সেখানে কিনা কলকাতায় ৫৭ শতাংশ ফেল (‌তাও কিনা বাংলায়)‌!‌ কী আর করা যাবে!‌ নতুন উপাচার্য দোষ চাপাচ্ছেন পুরানো উপাচার্যের ঘাড়ে। শিক্ষামন্ত্রীকেও আসরে নামতে হবে। বিকাশ ভবনে নয়, একেবারে বাড়িতেই ডেকে পাঠালেন উপাচার্য, সহ উপাচার্যকে। আচ্ছা, বাম জমানায় এভাবে উপাচার্যকে কখনও শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে ছুটতে হয়েছে?‌ অনেক চেষ্টা করেও এমন ঘটনা মনে করতে পারছি না।

partha chatterjee
তবে শিক্ষামন্ত্রী একটা সত্যি কথা বলেছেন। সেনেটের নতুন নিয়মের কথা তিনি নাকি জানতেন না। ঠিকই বলেছেন। জানার কথাও নয়। শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ারে বসেও যিনি সারাক্ষণ ‘‌দলের মহাসচিব’ থাকেন, তাঁর এত সময় কোথায়?‌ ওই ছাত্রদের খাতা দেখে যেমন মনে হয়েছিল, এদের মাধ্যমিকে কে পাস করালেন?‌ ঠিক তেমনি এই শিক্ষামন্ত্রীর কথা শুনলেও মনে হয়, এঁকে শিক্ষামন্ত্রী কে বানালেন?‌ নিজের দপ্তর সম্পর্কে, শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও স্বচ্ছ ধানণাই তৈরি হয়নি। যে ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলে যান, সত্যসাধন চক্রবর্তী, পার্থ দে, কান্তি বিশ্বাস বা সুদর্শন রায়চৌধুরিদের কোনওদিন ‌তা বলতে শুনেছেন?‌
উপাচার্যদের ডেকে পাঠিয়ে কী হবে?‌ বড়জোর জোড়াতালি দিয়ে ফেলের সংখ্যা কমানো যাবে। সমস্যার গভীরে যাওয়ার মতো বিদ্যে বুদ্ধি বা সময় কোনওটাই নেই। এমনকি সদিচ্ছাও নেই। যাকে তাকে উপাচার্য বানানো যায় না, ঠিক তেমনি শিক্ষাদপ্তরও যাকে তাকে দেওয়া যায় না। যিনি পাইকারি হারে এত অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন, এই সহজ সত্যিটা তিনি কবে যে বুঝবেন!

book-banner-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.