সন্ধে নামে কক্স বাজারে

সুমিত চক্রবর্তী

সমুদ্র মানেই মন জুড়িয়ে দেওয়া এক অনুভূতি। বাঙালি সমুদ্র বলতেই বোঝে পুরী। সবার আগে সে ছোটে পুরীতে। আর রাজ্যের মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র বলতে ছোটে দিঘায়। ইদানীং কেউ কেউ বকখালি, তাজপুর, মন্দারমণিতেও যাচ্ছেন।

দক্ষিণের সমুদ্রেও অনেকে ঘুরে এসেছেন। সেই সব সমুদ্র সৈকতের কথাও শোনা যায় অনেকের মুখে। কিন্তু একটু পাশের দেশে গেলে কেমন হয় ? বলুন তো বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত কোথায় ? তাহলে ঘুরে আসুন বাংলাদেশের কক্সবাজারে।

coxbazar2

ভিন দেশ শুনে অনেকে হয়ত ভয় পেয়ে যান। পাসপোর্ট, ভিসা লাগে ঠিকই। কিন্তু এ আর এমন কী? অনেকেরই পাসপোর্ট আছে। আর ভিসা তো অনেকটা ট্রেনে টিকিট কাটার মতোই। কয়েক ঘণ্টার তো ব্যাপার।

কক্সবাজার যেতে হলে চট্টগ্রাম থেকেই সুবিধা। মাত্র ১৫২ কিমি। সমতলের রাস্তা। ঘণ্টা তিনেক ধরে রাখুন। অসংখ্য বাস আছে। রেলপথ স্থাপনের কাজও চলছে। যারা ঢাকা থেকে আসতে চান, তাদের সময়টা একটু বেশিই লাগবে। কারণ, ঢাকা থেকে কক্সবাজার ৪১৪ কিমি। ঢাকা থেকে বিমানে বা ট্রেনে আসতে পারেন চট্টগ্রাম, সেখান থেকে চলে আসুন কক্সবাজার।
কক্সবাজার একটি জেলা সদর। আগে এর নাম ছিল পালঙ্কি। এক সাহেব এই এলাকায় সামরিক কর্তা হয়ে আসেন। এই এলাকার উন্নয়নে বেশ বড়সড় ভূমিকা ছিল সেই সাহেবের। এই এলাকায় বাজার স্থাপন করেন। তাঁর নামেই জেলার নাম হয়ে গেল কক্সবাজার। আমাদের এখানেও মনে করুন ফ্রেজারগঞ্জ বা হেনরি আইল্যান্ডের কথা। সেই সমুদ্র সৈকতগুলিও সাহেবদের নামেই।

কক্সবাজার সৈকতের দৈর্ঘ্য কত ? ১২০ কিমি। না, ছাপার ভুল নয়, সত্যিই ১২০ কিমি। এত লম্বা বিচ আপনি কল্পনা করতে পারেন ? অর্থাৎ, যতদূরেই যান, সমুদ্রের উত্তাল গর্জন আপনার সঙ্গেই থাকছে। জোয়ারে তার যেমন উত্তাল রূপ, ভাটায় সে যেন ততটাই শান্ত, স্নিগ্ধ।

সমুদ্রের পাড় ধরে গেলে একের পর এক দর্শনীয় জায়গা। কয়েকটি নাম মনে রাখুন- লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী। এর মধ্যে কলাতলীতে পর্যটক অনেকটাই কম। ছাতার নিচে, আরাম কেদারায় বসে উপভোগ করুন নির্জন সমুদ্রকে। লাবনী, সুগন্ধাও দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে পর্যটকদের কাছে।

coxbazar3

পরের দিন ঘুরে আসতে পারেন আরও দুটি মনোরম জায়গায়। নিমছড়ি ও ইনানী। নিমছড়ি হল কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৮ কিমি। যাওয়ার পথটা চোখ জুড়িয়ে দেবে। রাস্তার বাঁ দিকে শুধুই পাহাড়। আর ডানদিকে তাকালেই দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র। নিমছড়িতে পাহাড়ের উপর দারুণ এক রিসর্ট আছে। ক্রিসমাস ট্রিতে ঘেরা ওই উপত্যকায় এলে মনে হবে স্বর্গে পৌঁছে গেছেন।
হিমছড়ি সৈকত থেকে ইনানী সৈকত মাত্র ১০ কিমি (কক্সবাজার থেকে ৩৫ কিমি)। সমুদ্র স্নানের ইচ্ছে থাকলে বেছে নিতে পারেন এই ইনানীকে। কারণ, এত পরিষ্কার নীল জল আর কোথাও পাবেন না।
তাহলে আর দূর দেশে কেন, নিজের পড়শী দেশেই না হয় একটু ঘুরে আসুন। এই কক্সবাজারকে নিয়ে দারুণ একটা কবিতা লিখেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় (কক্সবাজারে সন্ধ্যা)। সুনীল, শক্তি মাঝে মাঝেই যেতেন এই কক্সবাজারে। আরও অনেক সাহিত্যে খুঁজে পাবেন কক্সবাজারকে। অনেকে বলেন, বাংলাদেশের সেরা আকর্ষণই হল এই কক্সবাজার। আপনিও একবার ঘুরে আসুন। দেখে আসুন বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.