কমলেশ্বরের ভূত এবার অরিন্দমের ঘাড়ে!‌

নন্দ ঘোষের কড়চা

nanda ghosh logo
কোনও কিছুতেই এদের শান্তি নেই দাদা। যখন যা পারছে, তাই করছে। আসলে, কোনটা হচ্ছে আর কোনটা হচ্ছে না, এরা নিজেরাই কিছু বুঝতে পারছে না। কখনও ছুটছে সাহিত্যের দিকে, কখনও থ্রিলারের দিকে। কখনও গোয়েন্দা তো কখনও পুলিশ। প্রেম, যৌনতা, হিংসা–‌এসব তো আছেই। যখন কোনওটাই সামাল দিতে পারছে না, তখন এটার সঙ্গে ওটা মিশিয়ে ককটেল করে দিচ্ছে।

আমাদের অরিন্দম শীলের হয়েছে সেই দশা। কখন যে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। কী জানি, তিনি হয়ত বলবেন, যখন যেটা করা উচিত, তখন সেটাই করি। যখন মনে হয়েছে সিপিএম করা উচিত, সিপিএম করেছি। আবার যখন মনে হল তৃণমূল করা উচিত, তৃণমূল করছি। তা বা করছেন। এই একটা ব্যাপারে তাঁর টাইমিংয়ে বিশেষ ভুল হয়নি।

arindam shil1

রাজনীতি থাক গে। সিনেমার কথায় আসা যাক। বহুদিনের স্বপ্ন ছিল, সিনেমা বানাবেন। সত্যিই তো!‌ কাঁহাতক আর সিরিয়াল বা টেলিফিল্মের অভিনেতা হয়ে থাকা যায়!‌ একটু বড় করে ভাবার ইচ্ছে হতেই পারে। বুঝলেন, এই জমানায় প্রোডিউসার পাওয়া যাবে না। এমনকী স্বয়ং সত্যজিৎ রায় হলেও তাকিয়ে থাকতে হত শ্রীকান্ত মোহতা বা স্বরূপ বিশ্বাসদের দিকে। আর মাথার ওপর অফুরন্ত ‘‌অনুপ্রেরণা’ না থাকলেও কিছু হওয়ার নয়।

নতুন গোয়েন্দা কাহিনি নিয়ে শুরু করবেন। তা ভাল। বেছে নিলেন শীর্ষেন্দুর শবরকে। ব্যাপারটা মন্দ হল না। কিন্তু এই মহাশয় এক গোয়েন্দায় সন্তুষ্ট নন। হাত বাড়াতে হল ব্যোমকেশের দিকে। দল ভাঙানোর খেলা। অঞ্জন শিবির থেকে আনা হল আবিরকে। একইসঙ্গে ব্যোমকেশ ছিনতাই, একইসঙ্গে ফেলুদাও ছিনতাই (‌কারণ, তখন আবির মানে দুটোই)‌। উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে কে না সামিল হতে চায়!‌ ‌ছবিটা যে খুব মন্দ হল, এমন নয়। হ্যাঁ, ছবিটা তিনি বানাতে জানেন। ছবির মার্কেটিং থেকে পাবলিসিটি, সব মিলিয়ে কমপ্লিট প্যাকেজ। এমনকী শুটিং স্পটে ঝামেলা হলে কীভাবে পাল্টা চমকাতে হয়, পুলিশ লেলিয়ে দিতে হয়, সেটাও জানেন।

arindam shil2

এই পর্যন্ত ব্যাপারটা ঠিকই আছে। কিন্তু বায়ু বড় সাংঘাতিক জিনিস। বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। আরেক পুচ্ছপাকা কমলেশ্বর মুখুজ্জের ভূত শ্রীমান অরিন্দমের ওপরেও চেপেছে। কমলেশ্বর বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় করলেন। তারপরই মনে হল, এবার বিভূতিবাবুকে হটিয়ে দিয়ে নিজেই গল্প লিখলে কেমন হয়!‌ ব্যাস, বানিয়ে ফেললেন অ্যামাজন অভিযান। মোহতাবাবুর কল্যাণে শঙ্করের নতুন স্রষ্টা আমাদের কমলেশ্বর। একই ব্যামো বোধ হয় অরিন্দমকে তাড়া করছে। তাঁর মনে হচ্ছে, খামোখা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে আর জড়িয়ে লাভ কী?‌ বুড়ো বয়সে মানুষটাকে আর কষ্ট দিয়ে লাভ কী?‌ তিনি নিজেই যদি শবর লেখেন, কেমন হয়!‌ এমন আবদারের কথা আবার শীর্ষেন্দুকে বলেও রেখেছেন। বেচারা শীর্ষেন্দু!‌ তাঁর শবর আর তাঁর থাকবে না!‌ বিভূতিবাবুর মৃত্যুর পর শঙ্করের মালিকানা হাতছাড়া হয়েছিল। কিন্তু শীর্ষেন্দুবাবুকে হয়ত জীবদ্দশাতেই শুনে যেতে হবে, শবর আর তাঁর সৃষ্টি নয়।

এখানেই বায়ু থামেনি। শীতকাল এসে গেছে সুপর্ণা। এবার শখ হয়েছে ফেলুদা বানাবেন। সন্দীপ রায়ের কাছে সত্ত্ব চেয়ে বসে আছেন। আরও এক নিপাট ভাল মানুষ এই সন্দীপ রায়। বাবার সৃষ্টি সযত্নে আগলে রেখেছিলেন। এটাও না বেহাত হয়ে যায়!‌ কারণ, শীর্ষেন্দু বা সন্দীপ বিলক্ষণ জানেন, ‘‌অনুপ্রেরণা’‌ নামক শব্দটি বড় ভয়ঙ্কর। ফেলুদাতেও কিন্তু শেষ নয়। এবার ইচ্ছে হয়েছে, প্রসেনজিৎকে নিয়ে সিনেমা করার। এবং তা এই বছরেই। প্রসেনজিৎ–‌ও ‘‌হ্যাঁ’ বলেই দিয়েছেন। আপাতত প্রেম–‌ট্রেম জাতীয় কিছু একটা হবে। তারপর কি তবে কাকাবাবু ছিনতাই!‌ এখনই এমন ইচ্ছে নেই। তবে শীতল বায়ু কমে গিয়ে বৈশাখের বায়ুতে এমন ইচ্ছে হবে না, কে বলতে পারে!‌ ওই যে বললাম, বায়ু বড় সাঙ্ঘাতিক জিনিস।।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.