কিছু কিছু লোক মরে গিয়ে বেঁচে যায়। তাঁর নাম নিয়ে যা যা অপকর্ম হয়, সেগুলো অন্তত দেখে যেতে হয় না। যখন অ্যামাজন অভিযান দেখি, তখন মনে হয় ভাগ্যিস বিভূতিভূষণ নেই। এই ছবি দেখলে নির্ঘাত আত্মহত্যা করতেন। নয় কমলেশ্বর মুখুজ্জেকে টাটকা চিবিয়ে খেতেন।
এখন মনে হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ও চলে গিয়ে ভালই করেছেন। তাই রিঙ্গোর এমন ভুলভাল ছবিটা দেখতে হল না। বছরের শুরুতে কী মুরগিটাই না হলাম। ছবির নাম— রে। আহা, কী ঝকঝকে নাম। পোস্টার দেখে ভাবলাম, এই ছবির মধ্যে বোধ হয় সত্যজিৎ রায়ের ছায়া আছে। চেয়ার নিয়ে নদীর ধারে বসে আছে শাশ্বত। সে নাকি একজন লেখক। ভাবলাম, কিছু বুদ্ধির ছাপ তো নিশ্চয় থাকবে। বছরের শুরুতে এই ছবি দেখতেই হবে।
ও মা, কোথায় কী? একেবারে গাঁজাখুরি বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই। লেখক–টেখক কিছুই নয়। আসলে, ভীতুর ডিম। পরে জানা গেল, রাঁচি থেকে পালানো পাগল। মুড়ি–মুড়কির মতো খুন হচ্ছে। লাশ গায়েব হয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ একটা খুনখারাপির আবহ। কখনও মন্দার বোস, কখনও ডক্টর হাজরা নামগুলো উঠে আসছে ঠিকই। তাই বলে এর সঙ্গে কস্মিনকালেও সত্যজিৎ রায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। পাগলটা আসলে কে, লেখক নাকি পরিচালক, সেটাই বড় প্রশ্ন। পুচ্ছপাকা পরিচালক রিঙ্গো এমন একটা হেঁয়ালি করে চলেছেন, কখনও মনে হচ্ছে, এটা বোধ হয় সত্যজিৎ রায়ের বায়োপিক। কখনও মনে হচ্ছে, সত্যজিৎকে শ্রদ্ধার্ঘ্য। আসলে, প্রেম, থ্রিলার, হিংসা, সাহিত্য, প্রকৃতি একসঙ্গে সব ঘাটের জল খেতে গিয়ে জাস্ট পিন্ডি চটকে দিয়েছেন।
প্রোডিউসারদের মুরগি বানিয়ে যে যা পারছে, করে যাচ্ছে। এরা নাকি ডাইরেক্টর। প্রোডিউসারদেরও ধন্যি। এই ছবি বানাতে কেউ টাকা ঢালে! অপচয় করার তো আরও অনেক উপায় ছিল। গিয়ে দেখলাম, হল একেবারেই ফাঁকা। ভাবলাম, এত ভাল একটা ছবি, দেখতে লোক এল না! ভাল জিনিসের সমঝদার বোধ হয় কমই হয়। ছবি একটু গড়াতেই ভুল ভাঙল। বুঝলাম, যারা আসেনি, তারাই আসলে বুদ্ধিমান। যারা এসেছে, তাদের সময়, টাকা দুটোই গচ্ছা গেল। বাড়তি পাওনা একরাশ বিরক্তি। আমি নন্দ ঘোষ, আমিও বেমক্কা মুরগি হয়ে গেলাম! না বাপু, কিছু একটা করা দরকার। রিঙ্গোকে কোথায় আর খুঁজে বেড়াব! রাগ হলে ইদানীং সব বাঙালি যা করে, আমিও বরং, তাই করি। বেঙ্গল টাইমসে লিখব, আর ফেবুতে পোস্টিয়ে দেব। তারপর বুঝবি ঠেলা। রিঙ্গো, চপ তেলেভাজার দোকান কর, সিন্ডিকেট কর, যা খুশি কর। দোহাই, আর ছবি বানানোর চেষ্টা করিস না।