সিকিমের ব্র‌্যান্ড অ্যাম্বাসাডর রহমান!‌ বাইচুং নন কেন?‌

স্বরূপ গোস্বামী

নিজের রাজ্যের কৃতী সন্তানকে উপেক্ষা করা যেন একটা ট্রাডিশন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাজ্যের ব্র‌্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বাছতে গিয়ে ভিনরাজ্যের তারকা ধরে আনা হচ্ছে। এই রাস্তায় বাংলা হেঁটেছে। এই রাস্তায় সিকিমও হাঁটল। সিকিমের ব্র‌্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নাকি এ আর রহমান। এই সঙ্গীত পরিচালকের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও বলছি, এই নির্বাচনের পেছনে চমক হয়ত আছে, কিন্তু বাতববোধ একেবারেই নেই। ফলে, সিকিমের কোনও উন্নতি হবে না, হলফ করেই বলা যায়।

a r rahman
সিকিম বলতেই কার কথা সবার আগে মনে পড়ে?‌ অবশ্যই বাইচুং ভুটিয়া। ছোট্ট একটা পাহাড়ি রাজ্যকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। অন্য এক পরিচিতি এনে দিয়েছেন। ওই ছোট্ট রাজ্যের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকেও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া যেতে পারে, এটা বাইচুং–‌ই দেখিয়েছেন। শুধু ফুটবলে নয়, সমাজের নানা ক্ষেত্রে এটা অনুপ্রেরণার কাজ করতে পারে। রাজ্যের ব্র‌্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বাছার সময় তাঁর কথা মনে পড়ল না?‌ মুম্বই থেকে কিনা এ আর রহমানকে ধরে আনতে হল?‌ রহমানের সঙ্গে সিকিমের কী সম্পর্ক?‌ অনুষ্ঠানে দু চারটে ভাল ভাল কথা বলতে হয়। রহমানও বললেন। কিন্তু তাঁকে দেখে কি কেউ সিকিমে বেড়াতে যাবেন?‌ নাকি শিল্পে বিনিয়োগ করতে যাবেন?‌ বাইংচুংয়ে যদি এতই অ্যালার্জি থাকে, তাহলে বলিউড অভিনেতা ড্যানির কথা ভাবা যেত। তিনিও সিকিমের এক ভূমিপুত্র।

baichung4
আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ব্র‌্যান্ড অ্যাম্বাসাডর কে?‌ শাহরুখ খান। তিনি বাংলার জন্য কী করেছেন?‌ বিনে পয়সায় দুপ একটা ছবি তুলেছেন, আর মাঝে মাঝে নবান্নে গিয়ে মাছভাজা খেয়েছেন, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অতিথি হয়ে বিরক্তিকর ভাষণ দিয়েছেন। এত এত শিল্পপতিদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। কটা শিল্প এনেছেন?‌ এই রাজ্যের কজন অভিনেতাকে মুম্বইয়ে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন?‌ এই রাজ্যের পর্যটনকে তুলে ধরার ক্ষেত্রেই বা কী ভূমিকা নিয়েছেন? তাঁর জায়গায় সৌরভ গাঙ্গুলিকে করলে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারত। সৌরভ হলেন সেই বাঙালি, যিনি দেশের প্রতিটি রাজ্যে বাঙালির অন্য এক ছবি এঁকে দিয়েছেন। বাঙালি মানে ঘরকুনো, বাঙালি মানে ভীতু, বাঙালি লড়াইয়ে পিছিয়ে যায়, বাঙালি পরিশ্রম–‌বিমুখ। এরকম নানা ট্যাগলাইন বাঙালির নামের পাশে। যাঁরা ভিনরাজ্যে কাজ করতে গেছেন, তাঁরা জানেন। আমরা রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, সত্যজিৎ রায়দের কথা বলতাম ঠিকই, কিন্তু সে তো অনেক পুরনো উদাহরণ। সৌরভ গাঙ্গুলি হলেন সেই আইকন, যিনি মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। বাঙালি সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলার আগে ভিনরাজ্যের লোকেরা অন্তত দু’‌বার ভাবেন। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই মর্যাদার আসনটা সৌরভই তৈরি করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এসব ভাবার সময় কোথায়?‌ তিনি সবসময় চমক দেওয়ায় বিশ্বাসী। তাই তিনি শাহরুখকে বেছেছেন।
এত এত শিল্প সম্মেলন করার দরকার পড়ত না। সৌরভ গাঙ্গুলির মতো মানুষ যদি শিল্পপতিদের আবেদন জানাতেন, অনেক বেশি কাজ হত। মরা শিল্পের গাঙে জোয়ার না আসুক, অন্তত একটা শীর্ণ স্রোতস্বিনী দেখা যেত। কিন্তু তা আর হল কই?‌ ঘটা করে শিল্প সম্মেলন হবে। পোস্টারে, হোর্ডিংয়ে শহর ছেয়ে যাবে। মিথ্যে আশ্বাস থাকবে। সেটাকেই সাফল্য বলে তারস্বরে প্রচার হবে।
অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডকে দেখুন। ছোট্ট একটা রাজ্য। কিন্তু সেই রাজ্যের আসল মুখ কে, বুঝতে ভুল করেননি রঘুবর দাস। উপযুক্ত মর্যাদা দিয়েই কাজে লাগিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সে রাজ্যে শিল্প সম্মেলনের মুখ ছিলেন ধোনিই। ঝাড়খণ্ড যে সহজ সত্যিটা বুঝল, সেটা বাংলা বা সিকিম যদি বুঝত!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.