সোহম সেন
আমাদের চাওয়াগুলো কেমন বদলে যায়! দুদিন আগে যে মানুষটাকে মাথায় তুলে নাচি, দুদিন পরে সেই মানুষটাকেই ছুঁড়ে ফেলে দিতেও দ্বিধা করি না। কলকাতা ময়দান বারেবারে এসবের সাক্ষী থেকেছে। আরও একবার থাকল। একবুক অভিমান আর অপমানের যন্ত্রণা নিয়েই সরে যেতে হল সঞ্জয় সেনকেও।
কোচেদের জীবনে সাফল্য আর ব্যর্থতা অনেকটা রোদ আর মেঘের মতোই। কখনও সাফল্য আসে। কখনও আসে না। কী অবলীলায় আমরা ভুলে গেলাম, এই সঞ্জয় সেনই চোদ্দ বছর পর আই লিগ এনে দিয়েছিলেন। এই সঞ্জয় সেনই এনে দিয়েছেন ফেড কাপ। এতরকম সমস্যা, তারপরেও দলটাকে এক ছাতার তলায় ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। দলের খরচ বাঁচাতে চেয়েছেন, জুনিয়রদের তুলে আনতে চেয়েছেন, তাই কলকাতা লিগ থেকে দূরে দূরেই থেকেছেন। এগিয়ে দিয়েছেন তরুণ সহকারী শঙ্করলালকে। এই সংযম কজন কোচ দেখিয়েছেন?
যে বছর আই লিগ জিতলেন, সেই বছরই বড় অঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ফিরিয়ে দিতে দুবার ভাবেননি। বলেছিলেন, মোহনবাগান যে সম্মান দিয়েছে, এরপর সরে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। সামান্য কটা টাকার জন্য বেইমানি করতে পারব না। আজ সেই সব কথাগুলো আমরা নিমেশেই ভুলে যাব। কেন দল জিতল না, তাই নিয়ে বিক্ষোভ দেখাব, কোচের নামে যা খুশি বলে যাব, দরকার হলে গায়ে থুথু ছেটাব, তবে না আমরা সমর্থক!
একজন মানু্য তিল তিল করে দলটাকে তৈরি করেছেন। ভাল–মন্দর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তাঁকে সরিয়ে দিলেই যেন তরতর করে সাফল্য চলে আসবে। আমরা মহান বোদ্ধা। সঞ্জয় সেনের স্ট্র্যাটেজিতে কোথায় ভুল, আমরা বুঝে গেলাম। যাঁরা এসব স্ট্র্যাটেজির ভুল ধরেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করুন। অধিকাংশই দলের এগারোজন ফুটবলারের নামই বলতে পারবেন না। আগে রকে বসে গুলতানি হত, এখন তো ফেসবুক রয়েছে। জ্ঞান যেন উপচে উপচে পড়ছে। আর কটা দিন অপেক্ষা করা গেল না! নতুন মরশুমে না হয় নতুন কোচের কথা ভাবা যেত। অভিমানে সঞ্জয় না হয় নৈতিক দায় নিয়ে সরে গেলেন। ক্লাবকর্তারা একবারও তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন না? ফুটবলাররাই বা কেমন? তাঁরাও কেউ ধরে রাখার চেষ্টা করলেন না! ব্যর্থতার দায় শুধুই কোচের? খেলোয়াড়দের দায় নেই? যাঁরা দল গড়েছেন, তাঁদের দায় নেই?
সবাই সব দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন। দিনের শেষে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য কোচ নামক লোকটা তো আছেই।