প্রসূন মিত্র
কেউ চাকরি থেকে সরে দাঁড়ালেই তাঁর কেমন যেন প্রতিবাদী একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়ে যায়। আপনার ক্ষেত্রেও তেমনটা হচ্ছে। যাঁরা আপনাকে দিনরাত গাল পাড়ত, তাঁরাও একটু একটু করে আপনার প্রশংসা করতে শুরু করেছেন। ভাবখানা এমন, যেন আপনার মতো প্রতিবাদী অফিসার হয় না। আপনি শাসক দলের তোয়াজ করেননি, তাই আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হল।। আর আপনি প্রতিবাদ করে, এমন চাকরিকে হেলায় ছেড়ে এলেন।
কী আশ্চর্য, কয়েকমাস আগেও, এই রাজ্যে শাসকদলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পুলিস অফিসার হিসেবে আপনার নাম উচ্চারিত হত। অনেক জেলার পুলিশ সুপাররাই নির্লজ্জ তাঁবেদারি করছেন। কিন্তু আপনার মতো কাউকে তৃণমূলের অঘোষিত জেলা সভাপতি বলা হয়নি। বলা হত, আপনিই নাকি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি। তৃণমূল নেতারা আপনার ভয়ে কোনও কথাই বলতে পারেন না। কারণ আপনি সোজা তাঁর নামে নালিশ ঠুকে দেবেন। আপনি চলে যাওয়ায় কারা খুশি হয়েছেন, জানি না। তবে জেলার সেইসব তৃণমূল নেতারা সবথেকে বেশি খুশি হয়েছেন।
আপনার ভবিষ্যত কী? পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। চাকরি ছেড়ে বিজেপি–তে যোগ দেবেন। আজ না হোক কাল, এটা হতে চলেছে। আরও একটা ছবি এখনই দেখা যাচ্ছে। আপনি লোকসভায় সম্ভবত বিজেপি–র হয়ে ভোটেও দাঁড়াবেন। ঝাড়গ্রাম থেকে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ, সেটি সংরক্ষিত আসন। বাকি রইল মেদিনীপুর আর ঘাটাল। যেটুকু বুঝছি, তাতে মেদিনীপুর থেকে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাই বেশি। তার জন্য যা যা চিত্রনাট্যের দরকার, সময়মতো সেইসব চিত্রনাট্য তৈরি হবে।
সভায় দাঁড়িয়ে কী বলবেন? তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে? নিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবেন? কী কী নক্কারজনক ভূমিকা আপনি পালন করেছেন, তা মিথ্যে হয়ে যাবে? বিরোধীদের ওপর কী রকম নির্যাতন করেছেন, এক লহমায় তা মুছে যাবে? মানুষের স্মৃতি বড় দুর্বল। কী জানি, অনেকে হয়ত সেসব ভুলেও যাবে। অনেকে হয়ত আপনাকে সৎ ও প্রতিবাদী বানিয়ে ফেলবে।
কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, এই শিক্ষাটা আপনার পাওয়া খুব দরকার ছিল। তোয়াজ করে কাউকেই যে চিরকাল খুশি রাখা যায় না, এই বার্তাটা অন্যান্য পুলিশ কর্তাদের কাছে যত পৌঁছয়, ততই মঙ্গল। শেষবেলায় যে পরিণতিটা আপনার সঙ্গে হয়েছে, এটাই আপনার প্রাপ্য ছিল। তবে চাকরি ছাড়ার যে সাহসটা দেখিয়েছেন, তার জন্য একটা কুর্নিশ অবশ্যই প্রাপ্য।