নতুন বছর এলেই বাঙালি অপেক্ষা করে বইমেলার। জেলায় জেলায় শুরু হয়েও গেছে। কিন্তু কলকাতায়? নতুন ঠিকানায় কেমন হবে বইমেলা? তাই নিয়েই লিখলেন মৃন্ময় হালদার।।
বইমেলা সংক্রান্ত পর পর দুটি প্রতিবেদন পড়লাম। কোনও সন্দেহ নেই, বাঙালির জীবনে সেরা মেলা হল বইমেলা। যাঁরা বইমেলায় যান, তাঁরা সবাই যে ভাল পাঠক, এমন নয়। তবু যান। কারণ, এ এক অভ্যেস। কিছুটা মাদকতা। কিছুটা হয়ত স্ট্যাটাস সিম্বল। কিছুটা নিজেকে সংস্কৃতিমনষ্ক হিসেবে জাহির করা। সবমিলিয়ে বইমেলার এমনই অমোঘ টান, যা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা যায় না।
সেই বইমেলা কোথায় হবে, তা নিয়ে সুস্থ বিতর্ক হতেই পারে। জায়গা পছন্দ হল না, এটা বলা মানে সরকার বিরোধীতা নয়। দুটি লেখার সঙ্গেই আমি একমত। সত্যিই, করুণাময়ী কখনও বইমেলার জায়গা হতে পারে না। এমনকী মিলন মেলাও ছিল না। তার থেকে ঢের ভাল ময়দান। যে কোনও বইপ্রেমীর মতামত নিন। আমার ধারণা, অন্তত আশি শতাংশ বইপ্রেমী মানুষ চাইবেন, বইমেলা ময়দানেই হোক। দূষণ নিয়ে কেউ কেউ অহেতুক বাড়াবাড়ি করেন। যেন বারো দিন বইমেলা না হলে শহরটা একেবারে দূষণমুক্ত হয়ে যাবে। দূষণ নিয়ে এতই যদি চিন্তা থাকত, তাহলে গঙ্গাসাগর মেলার আগে বাবুঘাটের এই দশা হত না। পুজোর সময় যে হারে মাইক ও ডিজে বাজে, তাতে যে দূষণ ছড়ায়, তা বন্ধ করতে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। যত দূষণ নাকি বইমেলার সময়। বোঝাই যাচ্ছে, দূষণটা আসলে বাতাসে নয়, মনে।
হ্যাঁ, এটা ঘটনা, মিলন মেলার সংস্কার হচ্ছে বলেই করুণাময়ীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সময়েই সংস্কার করতে হচ্ছে কেন? বইমেলার জন্যই মিলন মেলার এই পরিচিতি। সেই বইমেলা কখন হয়, সেটা নির্ধারিত। সবাই জানে, জানুয়ারির শেষ বুধবার শুরু হয়। এটা জানার পরেও এই সময়েই সংস্কারে হাত দিতে হল? আসলে, কোন কাজটা কখন করতে হয়, কদিন লাগতে পারে, সেই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনাই থাকে না। রাজ্য সরকারের সদর দপ্তর যখন মহাকরণ থেকে নবান্নে গেল, বলা হল, সংস্কার করতে ছমাস লাগবে। ছ বছর হতে চলল। কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। মিলন মেলার ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। তাই বইমেলা ঠিকানাহীন।
এবছর বইমেলার অভিজ্ঞতা খুব ভাল হবে না, এটা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায়। সামনের বছর আর মিলন মেলা নয়। বইমেলা ফিরে আসুক চেনা ময়দানে। আশা করি, এই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি অহেতুক ঝগড়া করবে না।
(ওপেন ফোরাম। লেখকের নিজস্ব মতামত। বইমেলা নিয়ে সুস্থ বিতর্ক চলতেই পারে। আগামী কয়েকদিন চলুক। আপনিও আপনার মতামত চুলে ধরতে পারেন। ৩০০ শব্দে লিখে পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসে। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)