সবং আর মানসের রইল না!‌

স্বরূপ গোস্বামী

খুব ছোট থেকেই সবং নামটা শুনে আসছি। আর যতবার সবং শুনতাম, ততবারই শুনতাম মানস ভুঁইয়ার নাম। এই দুটো শব্দ যেন তখন থেকেই পরস্পরের প্রতিশব্দ। পরে জেনেছি, সবংয়ের মাদুর বিখ্যাত। শুনেছি, সেখানে কেলেঘাই–‌কপালেশ্বরীতে ভয়াবহ বন্যা হয়। কিন্তু কেন জানি না, সবং বললেই সবার আগে একটা নামই ভেসে ওঠে, তা হল মানস ভুঁইয়া।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আর কারও নামের সঙ্গে তাঁর কেন্দ্র এভাবে জড়িয়ে নেই। অনেকে মালদা আর গনিখানের কথা বলতে পারেন। কিন্তু গনিখান ছাড়াও মালদার নানারকম পরিচিতি আছে। কিন্তু সবং বললে, সেই মানস ভুঁইয়া। আমার মতো আরও অনেকেরই হয়ত সবং বললে ওই নামটাই মনে পড়ে। উল্টোটাও সত্যি, মানস বললেই সবং মনে পড়ে। একটা সমীক্ষা করে দেখতে পারেন। জ্যোতিবাবু কোন কেন্দ্রে দাঁড়াতেন, এমনকী মমতা ব্যানার্জি কোন কেন্দ্রের বিধায়ক, জিজ্ঞেস করুন। অর্ধেক লোক হয়ত ভুল বলবে। কিন্তু মানস ভুঁইয়ার কেন্দ্র জিজ্ঞেস করুন। যাঁরা এই নামটি শুনেছেন, তাঁরা সবাই একচান্সেই সবং বলে দেবেন। এই রেকর্ড বোধ হয় এই বঙ্গে আর কারও নেই।

manas bhunia
মাঝে মানসবাবু দুবার সবং থেকে হেরে গিয়েছিলেন। তখনও কিন্তু সবং মানেই মানস ভুঁইয়া। এই প্রথম বোধ হয় সেই তকমাটা হাতছাড়া হচ্ছে। এবং স্বয়ং মানস ভুঁইয়া নিজেই তার জন্য দায়ী। উপনির্বাচনে কী হবে?‌ ধরা যাক, মানস–‌পত্নী গীতা ভুঁইয়া দারুণ মার্জিনে জিতলেন। অনেকে বলবেন, নিজের গড় ধরে রাখলেন মানস। কিন্তু মানস নিজে তেমনটা আর বলতে পারবেন তো?‌
২০১১ তে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে হারানোর জন্য স্থানীয় তৃণমূল চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। চারজন নির্দল দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৬ তেও জিতেছেন বিরাট ব্যবধানে। সেবার তৃণমূল ও ভারতী ঘোষ অ্যান্ড কোং মানস ভুঁইয়াকে হারানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে গেছেন। তার পরেও জিতে এসেছেন। সেই তুলনায় উপনির্বাচনের এই লড়াই তো অনেক সহজ হওয়ার কথা। তিনি নিজে সাংসদ। তার উপর শাসক দলে। সঙ্গে একসময় আদাজল খেয়ে পেছনে লাগা ঘোষ কোম্পানি তো আছেই। শেষ লোকসভা নির্বাচনে দেব বিরাট ব্যবধানে জিতলেও সবং কেন্দ্রে কিন্তু মানসের থেকে পিছিয়েই ছিলেন। বিধানসভাতেও তৃণমূল হেরেছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভোটে। অর্থাৎ, সবং কোনওকালেই তৃণমূলের ছিল না। সবং কোনওকালেই মমতা ব্যানার্জির ছিল না।
কিন্তু ভোটের আগে মানস ভুঁইয়াকে বলতে হল, সবংয়ের মানুষ এবারও প্রমাণ করবে, তারা মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেই আছে। বলতেই পারতেন, সবং দেখিয়ে দেবে, এখনও তাঁরা মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে আছে। সেটা বলা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত হত। কারণ, ৬ বারই কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে এই সবং থেকে তাঁকে জিততে হয়েছে। গোটা বাংলায় সবংয়ের যেটুকু পরিচিতি, তা মাদুরের জন্য নয়, মানসের জন্যই। তাঁর স্ত্রীকেও বলতে হচ্ছে, আমি মমতা ব্যানার্জির প্রার্থী, সেটাই সবথেকে বড় পরিচয়। মানস ভুঁইয়ার স্ত্রী, এটা বড় পরিচয় নয়?‌ সবংয়ে দাঁড়িয়ে কিনা মানস ভুঁইয়াকে বলতে হচ্ছে, আমি মমতা ব্যানার্জির সৈনিক।
ভোটে কত মার্জিন হবে, সে তো পরের কথা। জিতলেও সবংকে আর মানসের খাসতালুক বলা যাবে না। মমতা স্তুতি করতে গিয়ে নিজেকে বড় অসহায় করে তুললেন। নিজেই নিজেকে হারিয়ে দিলেন ডাক্তারবাবু।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.