রাজেশ ভট্টাচার্য
কথায় আছে, পুলিশ চাইলে কী পারে না? গত কয়েক বছরে আমরা এমন অনেককিছুই দেখেছি। পুলিশকে প্রমাণ লোপাট করতে দেখেছি। মিথ্যে মামলা সাজিয়ে বিরোধীদের জেলে ভরতে দেখেছি। সরকারের নামে সামান্য সমালোচনা করলে হেনস্থা করতে দেখেছি।
কিন্তু যেটা ভাল, সেটাও মানতে হবে। ভিনরাজ্য থেকে অপরাধীদের ধরে আনতেও তো দেখেছি। অতি সম্প্রতি আবার সেই সক্রিয়তা ও দক্ষতা দেখতে পেলাম। বৈদ্যবাটীর চেয়ারম্যান খুনের অভিযুক্তকে উত্তর প্রদেশ থেকে ধরে আনল। অভিযানটি মোটেই সহজ ছিল না। প্রাণের ঝুঁকিও ছিল। তবুও ভিনরাজ্যে গিয়ে পুরো দলটিকেই ধরে ফেলল। এই কাজের জন্য পুলিশের, বিশেষ করে সিআইডি–র অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।

এই সিআইডি–কে দেখে সিবিআই যদি কিছু শিখত! সাড়ে তিন বছর ধরে তারা সারদা তদন্ত করেই চলেছেন। বলা ভাল, অশ্বডিম্ব প্রসব করে চলেছেন। মাঝে মাঝে দু–একজনকে জেরা। শুরুর দিকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার। ব্যাস, ওখানেই বিপ্লব শেষ। তারপর যথারীতি শীতঘুমে চলে যাওয়া। বারোমাসই এই শীতঘুম চলে।
সারদায় কে কে যুক্ত, তার অনেকটাই সাধারণ মানুষ জানে। একজন কনস্টেবলকে তদন্ত করতে দিলে সে হয়ত সবকিছু বের করতে পারত না। কিন্তু ষাট–সত্তর ভাগ ব্যাপারটা সে সাতদিনেই সেরে ফেলত। কিন্তু সিবিআই এর বোদ্ধারা সাড়ে তিন বছরেও তেমন কিছুই করে উঠতে পারলেন না। একটা সহজ ব্যাপার বুঝি, তদন্তের সদিচ্ছা থাকলে তা সমাধান করতে সাতদিনের বেশি লাগার কথা নয়। তার বেশি লাগছে মানেই ধামাচাপা দেওয়ার কাজ চলছে। কার সঙ্গে কার কী বোঝাপড়া, কেন দেরি হচ্ছে, চোখ কান খোলা রাখলেই বোঝা যায়।
তদন্তকারী সংস্থার প্রতি আস্থা রাখাই উচিত। কিন্তু কেউ যদি ক্রমাগত আস্থা হারানোর কাজ করে চলেন, তবে সেই আস্থা হারাতে বাধ্য। মানছি, সিবিআইয়ের ওপর চাপ থাকে। সেই চাপে যারা নতজানু হয়ে যায়, তাদের আর যাই হোক, সাহসী বলা যায় না। নতজানু হলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবেই। সেটাই হয়েছে।
সিআইডি–র ওপরেও নানা চাপ থাকে। কিন্তু তারপরেও যখন সুযোগ আসে, তখন তারা নিজেদের মুন্সিয়ানা ঠিক দেখিয়ে দেয়। সিবিআইয়ের সেই মুন্সিয়ানা নেই। বা থাকলেও তার প্রকাশ নেই। গত দু–তিন বছরের পারফরমেন্সের নিরিখে সিআইডিকে এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে। সিবিআই কর্তারা বরং ভবানী ভবনে এসে শিখে যান কীভাবে তদন্ত করতে হয়।
