রজত বসু
জঙ্গলের রাজা কে? আমাদের এসব জঙ্গলে সিংহ দেখা যায় না। সুন্দরবনে কয়েকটা রয়্যাল বেঙ্গল আর ডুয়ার্সে কিছু চিতাবাঘ— এই নিয়ে আমাদের বাঘ সাম্রাজ্য। কিন্তু দিন দিন হাতি মশাই যা দাপট দেখাচ্ছে, তাতে তাকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। রোজই লোকালয়ে হাতি বেরিয়ে আসার খবর। তাণ্ডব চালানোর খবর। কখনও দলমা থেকে নেমে এসে সন্ত্রাস চালাচ্ছে বাঁকুড়া–মেদিনীপুরে। আর ডুয়ার্সের নানা জায়গায় তো বহুদিন ধরেই তার অবাধ বিচরণ।
তিনদিনের ব্যবধানে দুটি খবর। দুটিই বেশ বড় আকারে বেরিয়েছে কলকাতার কাগজে। দুটিই মালবাজার এলাকায়। মাঝরাস্তায় হাতির ছবি তুলতে গিয়েছিলেন এক নিরাপত্তাকর্মী। কী জানি, হয়ত ভেবেছিলেন, এই বীরত্বের কথা ফেসবুকে ফলাও করে প্রচার করবেন। কিন্তু হাতি বুঝলে তো! তুলে সোজা আছাড়। বেঘোরে প্রাণটা গেল। তারপর রাস্তার ধার থেকে তাকে তুলে এনে ফেলে দিল মাঝরাস্তায়। বীরদর্পে আবার ফিরে গেল জঙ্গলে। সেই নিরাপত্তাকর্মীর পড়ে থাকা দেহটাই ছবি হয়ে উঠল।
আরও বড় ঘটনা রবিবার। এবার বেঘোরে প্রাণ গেল চিতাবাঘের। বেচারার অপরাধ? হাতির বাচ্চাকে বিরক্ত করছিল। মা–হাতির রাগ তো জানে না! চিতাবাঘের দিকে তেড়ে গেল হাতির দল। বাঘের যতই গতি থাক, হাতির গতিও উসাইন বোল্টদের মতোই। বাঘমামা ভাবল, গাছে উঠলে আর হাতি কিছু করতে পারবে না। তড়তড় করে গাছে উঠে পড়ল। কিন্তু এমন চিত্রনাট্য লেখা ছিল, কে জানত! হাতির দল এল গাছের সামনে। গাছ থেকে ফল পাড়ার মতোই শুঁড় দিয়ে টেনে নামাল সেই বাঘকে। পা দিয়ে পিষে মারা হল। মানুষের নিস্তার নেই। বাঘেরও নিস্তার নেই।
সহজ কথা, হাতিকে হাতির মতো থাকতে দিন। ও নিজের মতো নিজেকে গুছিয়ে নিক। তার সঙ্গে বেশি পাঙ্গা না নেওয়াই ভাল। ছবির ফ্ল্যাশ দেখলে হাতি মারাত্মক ক্ষেপে যায়। হাতির শরীর দেখে ভুল করবেন না। কী ভাবছেন, ছুটে পালিয়ে যাবেন! মনে রাখবেন, হাতি কিন্তু পার্থ চ্যাটার্জি নয়। এই শরীর নিয়েও সে অনায়াসে উসাইন বোল্টকে হারিয়ে দিতে পারে। একবার তেড়ে এলে আর রক্ষে নেই। স্বয়ং চিতাবাঘ পালাতে পারল না, আর আপনি তো কোন ছার!


