সব্যসাচী কুণ্ডু
স্কুলজীবনে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ফেল করা ছাত্রদের বিলাপ শুনতাম। একদল নিজের অক্ষমতাকে মেনে নিয়ে পরের বছর ভালো ভাবে পড়াশুনা করে ভালো ফল করার অঙ্গিকার করতো। তাদের যারপরনাই সান্ত্বনা দিয়ে মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা করতাম। আরেক দল বলতো যে এবার তো প্রস্তুতি ঠিকই ছিল। কিন্তু ওই হতচ্ছাড়া পরীক্ষক সব কঠিন কঠিন প্রশ্ন দিয়ে আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিলে। এই দ্বিতীয় দলটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেতাম না।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের বেহাল দশা সম্পর্কে আমরা সবাই প্রায় কমবেশি অবগত। রাজ্যে অনেক উত্থান পতন হল, পালা বদল হল। কিন্তু শিল্পের এই জীর্ণ রূপটা আরও প্রকট হতে লাগলো। আগের সরকার শেষকালে যা কিছু আনলেন, বর্তমান সরকার তাদের হতচ্ছাড়া আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়া করে ছাড়লেন। পুরানো বছর শেষ হয় আর নতুন বছর আসে। কিন্তু শিল্পের আর দেখা মেলে না। গোটা দেশের মধ্যে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ শিল্প গড়ার দিক থেকে সবথেকে উৎকৃষ্ট গন্তব্য। এটা আমরা যেমন বিশ্বাস করি, শিল্পপতিরা সেটা বেশ ভালোভাবেই জানেন। তবুও তাঁরা এই রাজ্য এড়িয়ে চলেন। কেন জানিনা! নিন্দুকেরা বলেন, আমাদের রাজ্যে পর্যাপ্ত জমির অভাব আর সিন্ডিকেটের দাপটের ভয়ে কেউ এখানে ঘাঁটি গাড়তেই চাই না। কে আর শিল্প গড়তে গিয়ে কোর্ট কাছারির চক্কর কাটতে চায়।
এবার আসল প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রী মিলে অনেকদিন ধরেই শিল্পের বেহাল দশাটা পাল্টানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেউ আর এই পাড়ায় আসতে রাজি হচ্ছেন না। কেউ আবার কথা দিয়েও শেষে বেঁকে বসছেন। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পের বেহাল দশার জন্য সরাসরি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করার যুক্তিটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। অবশ্য উনি একথাও বলেছেন যে তাঁর যুক্তির প্রসঙ্গে কেউ একমত হতেও পারেন, কেউ নাও হতে পারেন। এতে কড়াকড়ি কিছু নেই। কিছু গুণগ্রাহী তো কথাটা শুনে আনন্দে আত্মহারা। তাঁরা যথারীতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হয়তো একমত হতে পারবেন না। যদি শিল্প গড়ার মানসিকতা থাকে তাহলে আগে শিল্পের জন্য শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলুন। রাজ্যবাসীকে ভুলভাল পরিসংখ্যান দিয়ে কী লাভ। পরিশেষে জানাই, আপনারা জনগণের রায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি। ভালো কাজের জন্য যেমন জনগণের বাহবা আশা করেন, তেমন ভুল কাজের জন্য দোষ স্বীকার করাটাও আপনাদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। ওই দ্বিতীয় দলের মতো নিজেদের অক্ষমতা ও অকৃতকার্যতার দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সাময়িক হাততালি পাওয়া যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেই আসল সত্যিটা ঠিক বুঝতে পারেন।