মিডিয়া সমাচার
অসিত মাহাত
খুব ছোট বেলা থেকেই কাগজ পড়ার অভ্যেস। সেই অভ্যেসটা এখনও হারিয়ে ফেলিনি। ছোটবেলাতেও অপেক্ষায় থাকতাম বুধবারের। কারণ, সেইদিন আনন্দবাজারে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের কলাম বেরোবে। সব লেখার সঙ্গে যে একমত হতাম, এমন নয়। তবে, লেখাগুলো পড়তে বেশ লাগত। ভারী চমৎকার সেই উপস্থাপনা।
সময় বদলেছে। সুমনবাবু এখন আনন্দবাজারে নেই। তিনি এখন ‘এই সময়’ সংবাদপত্রে। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় কাগজটি পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলার অধিকাংশ জেলায় এই কাগজটি আসে না। অনেকে হয়ত নামই শোনেননি। তবু যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা নেটে পড়েন। যেমন আমি।
এখানেও প্রতি বুধবার তিনি একটি বিশেষ কলাম লেখেন। নাম— অমিত্রাক্ষর। মাঝে কয়েকমাস এই প্রিয় লেখাটি পাচ্ছিলাম না। কিছুটা হতাশই হচ্ছিলাম। শেষ একমাস আবার স্বমহিমায় সেই সুমনবাবু। চারটি লেখাই মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই। যেমন আজকের লেখাটিও ভারী চমৎকার। ডেঙ্গি নিয়ে সারা রাজ্যে যা চলছে, তা নিয়ে চমৎকার একটি ব্যঙ্গ রচনা। যেখানে দুই চাটুজ্জের সঙ্গে দুই মশার কাল্পনিক কথোপকথন। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি দুই চাটুজ্জের একজনের নাম অর্জুন, একজনের নাম সুন্দর। অর্জুনের আরেক নাম কী, সুন্দর বললেই তার আগে কোন শব্দটা আসে, যাঁরা বোঝার, তাঁরা বোঝেন। আড্ডার ছলে কী চমৎকার লেখাটা এগিয়ে গেছে। তীব্র আক্রমণ নেই, কিন্তু যেখানে যেটুকু শ্লেষের প্রয়োজন, ঠিক ঠিক পরিমাণেই আছে।
রাজ্যের মিডিয়াকুল কেমন চলছে, তার ইঙ্গিতও আছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেই সবাই সুড়সুড় করে লাইনে চলে আসে, বিপ্লব থেমে যায়, এমন ইঙ্গিত আছে। কেন ডেঙ্গির তথ্য চেপে যাওয়া হচ্ছে, তার ইঙ্গিত আছে। মশারা কেন সরকারের ফতোয়া মানছে না, তার ইঙ্গিত আছে। মন্ত্রীরা আসলে কতটা অসহায়, সেই করুণ ইঙ্গিতও আছে। শেষের দিকের কয়েকটা সংলাপ তুলে ধরা যাক।
সু.চ (সুন্দর চট্টোপাধ্যায়) : আমাদের যন্ত্রণার কথা তোমরা মশার বাচ্চারা কী করে বুঝবে! অর্জুনদা, কথাটা এরা ভুল বলছে না। কিন্তু লিডারকে এই উচিত পরামর্শটা দেবে কে! আমি তো পারব না দাদা, আমার ঘাড়ে কিন্তু একটাই মাথা।
অ. চ (অর্জুন চট্টোপাধ্যায়) : (সু.চ–র দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে): হতভাগা চুপ কর। মশাদের সামনে আর নিজেদের দুঃখের কথা বলিস না। ওদের কথা শুনে বুঝলাম মশারাও নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে তবে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমাদের তো ...!
সারা লেখা জুড়েই এমন অনেক মণিমুক্তো ছড়ানো। এই সময়ে দাঁড়িয়ে লিখতে বুকের পাটা লাগে বৈকি। হ্যাঁ, তাঁকেও নানা বাধ্যবাধকতার মধ্যেই কাজ করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরেও যেতে হয়। কিন্তু তারপরেও সত্যি কথাটা বলতে পারেন। আর দশজনের মতো জো–হুজুর হয়ে যাননি।
বেঙ্গল টাইমসকে ধন্যবাদ। মিডিয়া সমাচার নামক একটি আকর্ষণীয় বিভাগ চালু করার জন্য। এখানে অন্তত এইসব বিষয় নিয়ে লেখা যায়। যাঁরা সুমনবাবুর লেখাটি পড়তে চান, তাঁরা নিচের লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন। পুরো লেখাটি পড়ার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবেন না।
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=35860&boxid=14520453
(বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ— মিডিয়া সমাচার। এখানে মিডিয়া জগতের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। আপনারাও অংশ নিতে পারেন। ভাল কোনও লেখা পড়লে তা পাঠকদের জানাতে পারেন। লেখাটির লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন। )