লগ্নি খুঁজতে আপনি কেন, সিআইডি–‌কে পাঠালেই হত

আশিস দত্ত

অনারেবল মুখ্যমন্ত্রী. . . . .
একটা ছোট্ট অনুযোগ জানাতে এবং তার সঙ্গে আরও দু একটা কথা বলতে আজকে আমার এই চিঠি ।
আচ্ছা, কাগজ আর টিভি থেকে জানলাম, আপনি নাকি লগ্নি খুঁজতে বাংলার বাইরে গেছেন। আপনার ওপর কাজের যা চাপ, তার ওপরে এই খোঁজার চাপটা নিতে গেলেন কেন? অনুসন্ধানকারী এজেন্সি, মানে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা সিআইডি ছিল তো! খুঁজে খুঁজে ধরে বেঁধে আনাটাই তো ওদের কাজ! তাছাড়া খোঁজার ব্যাপারে ওদের তো আপনিই কতো স্পেশাল ট্রেনিং দিয়েছেন। এই যেমন—- চোখে দেখে ধরা, গন্ধ শুঁকে ধরা ইত্যাদি। তো ওদের কাজটা তো ওদেরই করতে দিতে পারতেন আপনি! আপনার ওপর কাজের যা চাপ, তা কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি—- উৎসব মোচ্ছব থেকে চিটফান্ড কান্ড সামাল দিতে দিতে, নানাবিধ বচনে ও পদক্ষেপে জনতাকে প্রতিদিন কাঁদানো আর হাসানো, একি কোনো মামুলি কথা! এছাড়া আপনার গোয়েন্দারা কতটা দক্ষ, তা তো আপনি ভালো করেই জানেন। যারা কত সহজে মাওবাদী ধরে, তাদের কাছে একটু পুঁজি খুঁজে আনাটা কোনো ব্যাপার না কি? রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে যেখানেই মুখোশ পড়ে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকুক না, ওরা ঠিক গন্ধ শুঁকে শুঁকে খুঁজে বের করে ধরে আনতো। তাই বলছিলাম, আপনি আপনার গোয়েন্দাদের ভরসা করে, পুঁজি খুজে আনতে পাঠালে আপনার ওপর এই বাড়তি চাপটা পড়ত না। যাই হোক, এখন তো আর কিছু করা যাবে না, কারণ আপনি অলরেডি বেরিয়ে পড়েছেন খুঁজতে। এখন থেকে ঠিক করে রাখুন, ভবিষ্যতে ফের পুঁজি খোঁজার দরকার পড়লে, নিজে না গিয়ে, গোয়েন্দাদের পাঠাবেন।

mukesh ambani
এবার আসি দু একটা ছুটকো ছাটকা কথায়। আচ্ছা, আপনাদের পার্টি অফিসগুলোতে কতটা রাজনৈতিক চর্চা হয়, কতটা সিন্ডিকেট চর্চা হয়, কতটা পুজোপাজা নিয়ে চর্চা হয়, কতটা পয়দাপানির চর্চা হয়, কতটা দালালি চর্চা হয়, কতটা লুডো খেলা হয়, কতটা তাস ও ক্যারাম খেলা হয়, কতটা খানাপিনা হয়, কতটা কামচর্চা হয়, অর্থাৎ কতটা লিবারেল হতে পেরেছে পার্টি অফিসগুলো, সে বিষয়ে খবর রেখেছেন কি? আপনার অনুপ্রেরণায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড যদিও অনেকটাই তলানিতে এসে পৌঁছেছে, তবুও এখনো সম্ভবত নির্মূল হয়নি। ইলেকশনকে কেন্দ্র করে এবং ইলেকশনের আগে ও দিনে কিছু রাজনৈতিক কার্যকলাপ ( বিরোধীদের ভয় দেখানো, আহত করা, বুথ বা স্টেশন ক্যাপচারের পরিকল্পনা করা যদি রাজনৈতিক কার্যকলাপের অন্তর্গত হয়, তবে। ) এখনও সংঘটিত হয় এবং যদিও তাতেও মানুষের সমর্থন উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পাচ্ছে, হ্রাস পাচ্ছে না। তবুও বলছি, খবর না রাখলে, খবর রাখুন। পার্টি অফিসগুলোকে সম্পূর্ণ রাজনীতি বিমুক্ত না করতে পারলে, সারাদিন রাজনীতি চেবানো হার্মাদদের পার্টি অফিসগুলোর মতো আপনাদের পার্টি অফিসগুলোও, আজকের অতি চালাক আর অতি রুচিশীল জনতার থেকে দ্রুত দূরে সরে যাবে।
আরও একটি বিষয় : হার্মাদ হারামজাদাদের কথা বাদ দিন, ওরা কোনওদিনই আপনার সাফল্য সহ্য করতে পারে না। তাই আপনার অঙ্কন, সাহিত্য, কাব্য, সঙ্গীত— এসব নিয়ে হার্মাদগুলো বরাবরই হিংসের বশবর্তী হয়ে ব্যঙ্গ করে এসেছে। কিন্তু আপনার দলীয় নেতা কর্মীরা কি আপনাকে যথাযোগ্য সম্মান দিচ্ছে ? খবর রেখেছেন সে বিষয়ে কিছু? খবর রেখেছেন কি— আপনার আঁকা ছবি, আপনার লেখা কবিতা, আপনার করা সঙ্গীত, আপনার দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্যোগে কোথায় কতটা প্রচার হচ্ছে, বা আদৌ প্রচার হচ্ছে কি না রাজ্যের কোথাও ? খবর না থাকলে, খবর নিন। আজকের দিনে নিজের প্রচারের ঢাক নিজেকেই পেটাতে হয় । খেয়াল রাখুন, প্রচার বক্সের আওয়াজ যেন কয়েক লক্ষ ডেসিবেলে পৌঁছে যায়, যাতে বেশ কিছু প্রাণ প্রাণ হারায়, যাতে সেই খবরে সুইডিশ একাডেমি চমকে যায়, যাতে পাঁচ সাতটা নোবেল একসঙ্গে আপনার জুটে যায় ।
পুঁজি খুঁজতে গোয়েন্দা নিয়োগ, পার্টি অফিসগুলোকে রাজনীতি বিবর্জিত করা, নিজের প্রচারের ঢাক নিজেই পেটানোর আবেদনের মধ্য দিয়ে, আপনার নোবেল পাবার আশা পুনরায় ব্যক্ত করে, আমার আজকের এই চিঠি এইখানেই শেষ করছি ।
বিনীত–
আপনার প্রকটিত গুনে বিদ্ধ এক রক্তাক্ত নাগরিক

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.