ধীমান সাহা
সবথেকে বেশি অসহিষ্ণুতা কোথায়? রাজনৈতিক দল বা সরকারের কথা ছেড়ে দিন। টিভি চ্যানেলের অসহিষ্ণুতাও কি কম? অ্যাঙ্কর যা বলাতে চাইবেন, সেলিব্রিটিকে সেই সুরেই কথা বলতে হবে। একটু ভিন্নমত হলেই নানাভাবে চেপে ধরা হবে। এমনকী সেই তালিকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিও বাদ নেই। তাঁকেও মাঝপথে বারবার থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
এমন কাণ্ডই বারবার করছিলেন রাজদীপ সরদেশাই। কোনও সন্দেহ নেই, দেশের টিভি সাংবাদিকতায় রাজদীপ এক পরিচিত নাম। একডাকে সবাই চেনেন। হয়ত তাই তাঁর চ্যানেলে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। কিন্তু ইটারভিউয়ের নামে এ কী অসহিষ্ণুতা? প্রণববাবু ধীরে ধীরেই কথা বলেন। নিজের যুক্তি মেলে ধরেন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে তাঁকে বলতে দেওয়াই হচ্ছিল না। মাঝপথে ফোড়ন কেটেই চলেছিলেন রাজদীপ। কথার সুর কেটে যাচ্ছিল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির।
সচরাচর মেজাজ হারান না। কিন্তু এই অসভ্যতা কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! তাই রাজদীপকে বলেই ফেললেন, ‘আপনি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলছেন। কাউকে যখন কোনও প্রশ্ন করবেন, তখন তার উত্তরটা শোনার ধৈর্য দেখাতে হয়। আমি আপনার চ্যানেলে আসার জন্য হ্যাংলামি করিনি। আপনিই আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু বারবার যেভাবে মাঝখানে থামিয়ে দিচ্ছেন, এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না।আগে শিষ্টাচার শিখুন।’
মাঝপথে থামিয়ে দেওয়ার এই রোগটা রাজদীপের একার আছে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। এই ব্যাপারে তাঁর থেকে অনেকগুন এগিয়ে শ্রীমান অর্ণব গোস্বামী। তিনি লোককে ডেকে আনবেন। কিন্তু দুটো বাক্যও পুরো করতে দেবেন না। অমনি, নিজের মতামত সেই আমন্ত্রিত অতিথির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। কেউ তাঁর বিরুদ্ধ যুক্তি তুলে ধরলেই একেবারে ব্যক্তিগত আক্রমণে চলে যান। সাংবাদিকতার নাম, সঞ্চালনার নামে একধরনের অসভ্যতা দিনের পর দিন চলেই আসছে।
একেবারে সঠিক জায়গায় আঘাত করেছেন প্রণববাবু। একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষের যা করা উচিত, ঠিক তাই করেছেন। বার্তাটা শুধু রাজদীপের জন্য নয়। বাংলা চ্যানেলেও এমন মাতব্বর কিন্তু কম নেই। সঞ্চালকের কী দায়িত্ব, সেটাই তাঁরা বোঝেন না। ভাবেন জ্যাঠামি করার জন্যই বোধ হয় তাঁকে চ্যানেলে বসানো হয়েছে। প্রণববাবুর এই তিরষ্কার সবজান্তা জ্যাঠামশাইরা দেখলেন কিনা কে জানে!