ঋতব্রত সিপিএমের প্রতিনিধি নন। ঋতব্রত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ প্রজন্মের প্রতিনিধি। যা ঋতব্রত করেছেন, আপনিও কি সারাক্ষণ সেটাই করতে চাইছেন না? আপনার ভেতরেও কি একটা ছদ্ম ঋতব্রত লুকিয়ে নেই? প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালেন শচীন পাত্র।।
চারিদিকে ছিছি রব। ঋতব্রত ব্যানার্জি এমন, তাতো জানতাম না। কেউ কেউ জাত–মুরুব্বি। তাদের গলার স্বর একটু অন্যরক। কী, বলেছিলাম না, এই ছোকরা সুবিধের নয়। তখন শোনেনি। এখন দেখলেন তো!
সত্যি করে বলুন তো, আপনার মধ্যেও কি আরও একটা ঋতব্রত লুকিয়ে নেই? ঋতব্রত সাংসদ। তাঁর প্রভাব বেশি। তিনি সহজেই একজন মেয়েকে প্রভাবিত করতে পারেন। সারাক্ষণ সেই চেষ্টা কি আপনিও করে চলছেন না? যাঁরা দিনে অন্তত ছ–সাত ঘণ্টা ফেসবুকে মগ্ন থাকেন, তাঁদের সবার ভেতর একটা করে ঋতব্রত থেকে গেছেন।
না, ঋতব্রতর মতো লেখাপড়া বা বাগ্মিতা নেই। সেই যোগ্যতাও নেই। কিন্তু সব গোপন ইচ্ছেগুলোই আছে। এটা নিছক একটা দলের বিষয় নয়। নিছক সাংসদ হয়েছেন বলেই তিনি এমনটা করলেন, তাও নয়। আসল কথা হল, এটা একটা ব্যধি। সোসাল সাইটের ব্যধি। যা আপনার মধ্যে বা আপনার চেনাজানা লোকেদের মধ্যেও আছে।
আপনার সামনে থাকা লোকটি সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে খুটখুট করছে। তিনি মোটেই কোনও মহান কাজ করছেন না। যাঁরা শিক্ষামূলক কাজে লাগান বা যাঁরা খবর সম্পর্কে আপডেটেড থাকতে চান, তাঁদের জন্য এক ঘণ্টাই যথেষ্ট। পথ চলতে চলতে তাঁদের ফোন ঘাঁটার দরকার পড়ে না।
যদি দেখেন সারাক্ষণ তাঁর মন সেই ফোনের দিকে, সে ফোন ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারছে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে টুথব্রাশ হাতে নেওয়ার আগে যাঁর ফোনটা দরকার হয়, তাঁরা কোনও মহৎ কাজে যুক্ত নন। তাঁরা কোনও বিদ্যাচর্চা বা জ্ঞান চর্চা করছেন না। তাঁরা সারাক্ষণ চ্যাটেই মগ্ন। তাঁরাও সেই মহিলাই খুঁজে চলেছেন। আর যে মহিলার মধ্যে এই রোগটি আছে, তিনি পুরুষের হ্যাংলামো দিব্যি উপভোগ করছেন। যে যেমন, সে তেমন সঙ্গী ঠিক পেয়ে যায়। যাঁরা কাজের প্রয়োজনে ফেসবুক করেন বা নিছক কৌতূহলে বা অন্যদের খোঁজখবর নিতে এক দু ঘণ্টা ফেবুতে মগ্ন, তাঁদের কথা বলছি না। কিন্তু যাঁরা সারাক্ষণ সেখানেই মুখ গুঁজে থাকেন। যাঁদের মাথা সারাদিন নিচু হয়েই থাকে, তাঁদের মানসিক রোগী বা মানসিক প্রতিবন্ধী বলাই যায়। প্রতিটি মাতাল যেমন নিজের মাতলামিকে জাস্টিফাই করে, এরাও তাই। এমন ভাব দেখাবে, যেন দেশ দুনিয়ার কতই না খবর রাখেন। সিনেমা থেকে খেলা, সাহিত্য থেকে রাজনীতি— কোনও বিষয়েই তেমন স্বচ্ছ ধারনা নেই। আসলে, এঁদের কাছে ফেসবুক হল মেয়ে খোঁজার মাধ্যম। আর কিচ্ছু নয়। এক স্ত্রীতে সন্তুষ্ট নন। সঙ্গে সমানতালে পরকীয়া চালিয়ে যেতে হবে। এরা অফিস হোক বা বাড়ি, বাথরুম হোক বা বাস, দিবারাত্র সেটাই ভেবে চলেছেন। যখন ফোনটা হাতে নেই, তখন ছটপটানি দেখলেই বুঝতে পারবেন। মনে হবে, এক ঘণ্টা অক্সিজেন ছাড়া হয়ত থেকে যাবেন। কিন্তু ফোন ছাড়া পাঁচ মিনিট থাকতে পারবেন না। তখনও ভেবে চলেছেন, কোন মেয়েটাকে কোন মেসেজ পাঠানো আছে, দেখি রিপ্লাই আসছে কিনা। না এলে আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। গুড মর্নিং থেকে গুডনাইট নিয়ম করে বলা যাক। একবার না একবার একটা স্মাইলি ঠিক পাঠাবে। সে হতভাগা জানেও না, সে লম্বা ওয়েটিং লিস্টে আছে। মেয়েটি তখন তার মতো আরও পঁচিশজনকে একসঙ্গে চরাচ্ছে। তবু নির্লজ্জের মতো মেসেজ পাঠিয়েই যাবে, উত্যক্ত করেই যাবে। নিজের বোকা বোকা ছবি দিয়েই যাবে। ওরে হতভাগা, তুই কোন উত্তম কুমার? কে তোর ছবি দেখতে চায়! কতটা হাস্যকর লাগে, এরা নিজেরাও বুঝতেও পারে না। আর এদের কোনও ভাল বন্ধুও নেই, যারা বুঝিয়ে দেবে। তাই, দিনভর এই মুর্খামি আর হ্যাংলামি চলতেই থাকে। আপনার চারপাশে নিশ্চিতভাবেই এমন অনেক ওরাং–ওটাংকে দেখতে পাবেন।
তাই ঋতব্রতর ভাইরাল ভিডিও দেখে ছি ছি করার আগে একবার আয়নার সামনে দাঁড়ান। সেই একই চেষ্টা হয়ত সারাক্ষণ আপনিও করে চলেছেন। আপনার সেই প্রভাব নেই, বাগ্মিতা নেই। তাই পাত্তা পাচ্ছেন না। ব্যর্থতার একটা হতাশা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সেই হতাশা থেকে আপনি হয়ত গালমন্দ করছেন। তাই জেনে রাখুন, একটা ছদ্ম ঋতব্রত আপনার ভেতরেও বাস করে। তাঁকে সযত্নে বাড়তে দেবেন, নাকি সুস্থ জীবনের দিশা খুঁজে নেবেন, সেটা আপনাকেই বেছে নিতে হবে।