পুলিশ নয়, বরং সিবিআইকেই জেরা করা হোক
সরল বিশ্বাস
ঋতুচক্রটাই দিন দিন কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। ছোট বেলায় পড়তাম, বৈশাখ, জৈষ্ঠ এই দুই মাস গরম কাল। কিন্তু এখন যা অবস্থা, এই প্রখর শরতেও রোদের চোখরাঙানি। এখন তো বছর দশমাস গরম কাল।
আমাদের সিবিআইয়ের হয়েছে উল্টোটা। তাদের আবার বছরে দশমাস শীতকাল। তারা দিব্যি শীতঘুমে থাকে। মাঝে মাঝে জেগে ওঠে। এত দেরিতে জেগে ওঠে, তখন বেলা গড়িয়ে, মধ্যাহ্ন পেরিয়ে সূর্যাস্তের সময় হয়ে যায়।
সাড়ে তিন বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট সারদা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। প্রথম প্রথম যে কোনও কারণেই হোক, বেশ সক্রিয় দেখা গেল। মনে হল, সিবিআই হয়ত পনেরো দিনেই তদন্ত শেষ করে ফেলবে। ঠিকঠাক তদন্ত করতে পারলে তার বেশি লাগার কথাও ছিল না। অন্তত আশিভাবে তদন্ত পনেরোদিনেই করে ফেলা যেত। মাসের পর মাস গড়িয়ে যায়, তদন্ত যেন থমকে গেল। যেটুকু চলল, তাও কচ্ছপের গতিতে। সাড়ে তিন বছরেও তদন্তকারি পুলিশ অফিসারদের ডাকা হয়নি।
কারা কারা প্রমাণ লোপাটে যুক্ত ছিলেন। পাড়ার পাঁচুদাও জানে। চায়ের দোকানের দীপকদাও জানে। কীভাবে লোপাট হয়েছে, কীভাবে আড়াল করা হয়েছে, সে গল্পও মুখে মুখে ছড়িয়েছে। অথচ, সাড়ে তিন বছর পর সিবিআই বাবুদের মনে হল, এবার তাদের দু–একজনকে ডাকা যাক। যে দুই অফিসার মূল পান্ডা বলে শোনা যায়, দুজনেই রয়েছেন বড় বড় জায়গায়। তাঁরা নিশ্চয় এই সাড়ে তিন বছরে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। আরও যা যা লোপাট করার, করে চলেছেন।
আর সিবিআই সেই লোপাট করার মোক্ষম সুযোগ দিল সাড়ে তিন বছর ধরে। আজ দুজনকে ডাকা হল। পরে হয়ত আরও দু–একজনকে ডাকা হবে। কিন্তু কার্যত কিছুই হবে না। শুধু যাওয়া–আসা, শুধু স্রোতে ভাসা।
এতদিন পর ডেকে কার্যত কিছুই পাওয়া যাবে না। তাঁরা বলবেন, মনে পড়ছে না। এতদিন পর সবকিছু মনে থাকার কথাও নয়। যাঁদের শুরুতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার ছিল, তাঁদের ডাকতে কেন এত দেরি হল, সহজ বুদ্ধিতে তার কোনও ব্যাখ্যা নেই? মাঝে মাঝে মনে হয়, এই কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপা দেওয়ায় সিবিআইয়ের ভূমিকাও কম নেই। এবার বরং তাঁদেরই জেরা হোক। কান টানতে টানতে যদি মাথায় পৌঁছনো যায়!