(ঋতব্রতকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্তে সবথেকে তীব্র বিরোধিতা কে করেছিলেন? রেজ্জাক মোল্লা। ধরা যাক, আজ তিনি চিঠি লিখছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। কী হতে পারত সেই চিঠির বয়ান? কাল্পনিক সেই চিঠি লিখলেন রক্তিম মিত্র)
বুদ্ধদেববাবু,
বয়সে আপনি আমার থেকে অনেকটাই ছোট। কিন্তু আমার অনেক আগেই আপনি মন্ত্রী হয়েছিলেন। আপনি শহুরে মানুষ, আমি চাষার ব্যাটা। তাই আপনি বলেই সম্বোধন করতাম।
অনেকদিন আপনার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয়নি। টিভিতেও আপনাকে দেখি না। কিন্তু কেন জানি না, মাঝে মাঝেই আপনার কথা মনে পড়ে। শেষ দু–তিন দিনে আরও বেশি করে মনে পড়ছে। কী জানি, আপনারও হয়ত আমার কথা মনে পড়ছে। হয়ত মনে হচ্ছে, ওই বুড়োটা ঠিকই বলেছিল।
মনে করে দেখুন। বছর তিনেক আগে ঋতব্রত নামের এই ছোকরাটিকে আপনারা রাজ্যসভায় পাঠালেন। অনেকে মেনে নিলেও আমি মেনে নিতে পারিনি। সেদিনই বলেছিলাম, দলের মধ্যে অনেক যোগ্য লোক ছিল। তাদের রাজ্যসভায় পাঠানো যেত। যদি বুঝতাম, আগের মতো পাঁচজন, ছজন করে পাঠানো যাচ্ছে, তাহলেও না হয় একটা ছোকরাকে গুঁজে দেওয়া যেত। কিন্তু যেখানে মাত্র একজনই যাবে, সেই একজন কিনা এই ঋতব্রত। সেদিনই বলেছিলাম, এই ছোকরা সুবিধার নয়। আপনারা কেউ শুনতে চাননি, বিশ্বাস করতে চাননি। ভেবেছিলেন, বুড়োটার ভিমরতি হয়েছে। হতাশায় উল্টোপাল্টা বকছে।
সত্যি কথাটা বলেছিলাম বলে উল্টে আমাকেই বহিষ্কার করে দিলেন। এই পু্চ্ছপাকা ছোকরার জন্য আপনারা আমাকে বের করে দিলেন। বলেছিলাম, এই ছোকরা লড়াই করে উঠে আসেনি। এর গায়ে কোনও ঘামের গন্ধ নেই। দলের কর্মীদের লড়াই এ বুঝবে না। এখন বুঝছেন তো, সেদিন কত খাঁটি কথাটা বলেছিলাম।
হ্যাঁ, আপনি বলতেই পারেন, আপনি তো লোভে পড়ে তৃণমূলে গেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। হ্যাঁ, তা হয়েছি বটে। তবে ওই গাছ লাগানো মন্ত্রী (উদ্যানপালন)। বলুন তো, ওটা আবার দপ্তর হল! আগে তবু কথা বলতে পারতাম। এখন তাও পারি না। এখন তাই বলতে হয়, যেটা দিদিমণি শুনতে চান। এ ছোকরারও দেখবেন সেই দশাই হবে। এ ভাবছে, অন্য দলে গেলে খোলা আকাশ পাবে। কিন্তু আখেরে কিছুই পাবে না। এতদিন তবু বইটই পড়ত, দু–চার কথা বলতে পারত। এবার পড়াশোনা ডকে উঠবে। বক্তৃতাও ভোঁতা হয়ে আসবে।
ঋতব্রতর বহিষ্কার নিয়ে এত কাগজে এত লোকের প্রতিক্রিয়া বেরোলো। অথচ, সেই সময় আমিই যে সবচেয়ে সোচ্চারভাবে বিরোধিতা করেছিলাম, সেটা সবাই কেমন বেমালুম ভুলে গেল! এটাই হয়। কেউ মনে রাখে না। কেউ কথা রাখে না। আপনাকে অনেক আক্রমণ করেছি। আগে বলতাম, দলে সম্মান পাই না। হয়ত অভিমান থেকেই বলতাম। সম্মান না পাওয়া কাকে বলে, উপেক্ষা কাকে বলে, ঠিকানা বদল করে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। তাই এখন বরং আপনাকে ভালই লাগে।
আমি তো তবু এত বছর লড়াই করেছি। তারপর বিক্ষুব্ধ হয়েছি। এ ছোকরা এত অল্পেই অধৈর্য হয়ে গেল! এবার বুঝলেন তো, দু পাতা বই পড়লেই নেতা হওয়া যায় না। বুঝলেন তো, কাদের তুলে এনেছেন? এই ছোকরার বিরুদ্ধে আমিও অনেক কথাই বলেছি। কিন্তু ওর যে এত তাড়াতাড়ি মাথা ঘুরে যাবে, তা বুঝিনি। যাই হোক, শিক্ষা হল। এই শিক্ষাটা সবার জন্যই দরকার ছিল।
শরীরের যত্ন নেবেন। ভাল থাকবেন।
আর হ্যাঁ, সিগারেট একেবারেই খাবেন না।