অণু গল্প
অম্লান রায়চৌধুরী
বিল্টু আর নেই। গতকাল আত্মহত্যা করেছে মেট্রো লাইনে ঝাঁপ দিয়ে। বাড়িতে সবাই উপস্থিত। হঠাতই বিল্টুরই ঘরে পাওয়া গেল একটা খাতা – খোলা ছিল। ওর মা তুলে নিয়ে এল — তাতে কিছু লেখা।
ও বলছে, দেখো মা, আমি কেমন ভাল হয়ে গেছি। মুখে মুখে তর্ক করি না। মাথা নিচু করে সব মেনে নিই। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলি। আমাকে নিয়ে কেউই আর কষ্ট পায় না।
একদিন শুনবে যে আমি আরও ভাল হয়ে গেছি।
তুমি চাইতে না, ক্লাসের সেরা ছেলেটির থেকে বেশি নম্বর আমি পাই, পেয়েছি আমি। বিশাল স্কুল ব্যাগটা এখন ভারি লাগছে না। সব হোমওয়ার্ক করছি। তোমার বলার অপেক্ষায় থাকছি না। দেখছ না সকালে, বিকালে নিজে থেকেই পড়তে বসছি। তোমার চাওয়ার মতো, সব পরীক্ষায় সেরা নম্বর পাচ্ছি।
কালকেও ভোরে উঠে শুনবে আমি যেন আরও ভাল হয়ে গিয়েছি।
তোমার দেওয়া সব খাবারই এখন আমার মুখে ভাল লাগে। সবই আমার পছন্দ। সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত নিয়ম করে খাবার খাই। আমার পছন্দ এখন তোমার পছন্দের সঙ্গে মিলছে।
এরপর রোজই শুনবে আমি ভাল হয়ে গিয়েছি।
তুমি বলতে না, খেলা ধুলা খারাপ ছেলেরা করে, তাই খেলা ধুলা না করে বিকেলে মাঠের কোনে এখন বসে খেলা দেখি। ছেলে মেয়েদের দৌড়াদৌড়ি দেখি। চিৎকার শুনি। ওদের আনন্দের মাঝে আমার আনন্দকে মেলাই। তোমার কথায় আনন্দিত হই।
আজকে বিকাল বেলায় যখন শুনবে আমি ভাল হয়ে গেছি, তখন কিন্তু আমি আর আমি থাকব না। সবার কমান্ড মেনে চলা একটি রোবটে পরিণত হব। আমি সবার কমান্ড মেনে চলব। কিন্তু তোমরা প্লিজ প্রশ্ন কোরো না কেন আমি রোবোট হয়ে গেছি। কারণ, আমি চাইনি রোবোট হতে। তবে এখন যখন রোবোট হয়েই গেছি আর সেখান থেকে ফেরত আসতে চাই না। আর মানুষে পরিণত হতে চাই না। বড় কষ্ট এই পরিবর্তনে, স্বতস্ফূর্ততার যাপন ছেড়ে, নতুন করা যাপনে আমি ক্লান্ত।
আসলে আমি মানুষ আর রোবোটের তফাতটা বুঝতাম না।
ওটা আর টানতে পরছিলাম না ।