ভুয়ো ডাক্তার জিন্দাবাদ

ভুয়ো ডাক্তারের বিরুদ্ধে এত অভিযান। কিন্তু যাঁরা তথাকথিত ডিগ্রিধারী, তাঁদের সম্পর্কেই বোধ হয় বেশি সচেতন থাকা উচিত। ডিগ্রিহীন ডাক্তারদের ডিগ্রি না থাকলেও, তাঁরা ডাক্তারিটা জানেন। আর ডিগ্রিধারীদের ডিগ্রি থাকলেও সবাই কি ডাক্তারিটা জানেন?‌ লিখেছেন তরুণ ভট্টাচার্য।।

fake doctor

কাগজ খুললেই একটা খবর চোখে পড়বেই। ভুয়ো ডাক্তার। সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে প্রান্তিক দক্ষিণবঙ্গ। আর খাস কলকাতা ও শহরতলি তো আছেই। অদ্ভুত এক আতঙ্কের আবহ তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে একটা সন্দেহ ও ঘৃণার বাতাবরণ।
কিন্তু কেন জানি না, এই ভুয়ো ডাক্তারদের থেকেও ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের থেকে বেশি সচেতন থাকা দরকার বলে মনে হয়। ভুয়ো ডাক্তার বলতে আমরা কাদের বুঝছি?‌ যাঁদের ডিগ্রি নেই, এই তো?‌ আমি এমন অন্তত পঁচিশজন ডাক্তারকে চিনি যাঁদের এমবিবিএস নেই, কিন্তু তাঁদের ডাক্তারি বিদ্যে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অনেকে হয়ত দীর্ঘদিন ওষুধের দোকান চালিয়েছেন। অনেকে দীর্ঘদিন কোনও ডাক্তারের সহকারী ছিলেন। তাঁদের ডিগ্রি নেই ঠিকই, কিন্তু অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে নিজেদের শিক্ষিত ও পরিমার্জিত করেছেন। বিভিন্ন বই পড়ে ও ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করেও অনেককিছু শিখেছেন। তাঁরা নিজেদের সীমাবদ্ধতা বোঝেন। অকারণ টেস্টের ফিরিস্তি না দিয়ে, চোদ্দ গন্ডা ওষুধ না দিয়ে, তাঁরা যথার্থই রোগীর পাশে থাকেন। টেস্ট না করিয়েই তাঁরা দিব্যি বুঝতে পারেন, রোগটা ঠিক কী। তেমন সিরিয়াস মনে হলে, তাঁরাই পরামর্শ দেন, এটা অমু্ক স্পেশালিস্টকে দেখানো দরকার। কোনটা নার্ভের সমস্যা, কোনটা স্কিনের সমস্যা, কোনটা লিভারের সমস্যা, এটুকু অন্তত বুঝতে পারেন। সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। আমার মনে হয়, তাঁদের নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং, তাঁরা আছেন বলেই রাতে–‌ভিতে আধা শহর, মফসসল ও গ্রামের মানুষেরা ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু পাচ্ছেন।
তথাকথিত বড় ডাক্তার ও নার্সিংহোম সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল নয়। সেখানে কিছু বোঝার আগেই দশ রকমের পরীক্ষা–‌নিরীক্ষা। আর ভয় দেখিয়ে যদি একবার অপারেশন টেবিলে তোলা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। যেটা সহজে হয়ে যায়, সেটাকে অহেতুক জটিল করে দেখানোর চেষ্টা। সেই ডাক্তারের ভারি ভারি ডিগ্রি আছে ঠিকই, কিন্তু ডাক্তারি কতটা জানেন, সন্দেহ থেকেই যায়। রোগ বুঝতে টেস্ট দরকার, এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু সত্যি করে বলুন তো, যেসব টেস্ট দেওয়া হয়, তার কতটা জরুরি আর কতটা অপ্রয়োজনীয়?‌ আসলে, নার্সিংহোমকে ব্যবসা দিতে হবে, আর সেখান থেকে ডাক্তারবাবুর কমিশনও আসবে। এই ডাক্তারের যদি ডিগ্রি থাকেও, তাহলেও তিনি কতটা বিশ্বাসযোগ্য। কতজন ডাক্তার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তিনি রোগীর টেস্টের কমিশন নেন না?‌ কজন ডাক্তার বলতে পারবেন, তিনি ওষুধ কোম্পানির টাকা বা উপহার নেন না?‌ তাহলে, ভুয়ো ডাক্তারদের দোষটা কোথায়?‌ তাছাড়া, এখনকার দিনে ডাক্তার হতে গেলে বা ডাক্তারি পেতে গেলে মেধাটাও খুব জরুরি নয়। বাপের টাকার জোরে ছেলে অনায়াসেই ডাক্তার হয়ে যাচ্ছে। জয়েন্টে না পেয়েও এখান ওখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে চলে আসছে। এইসব ডাক্তারের ডিগ্রি থাকলেও তার মূল্য কতটুকু?‌ তাই আমার মনে হয়, ভুয়ো ডাক্তারের থেকেও এইসব ডিগ্রিধারী ডাক্তার সম্পর্কে আরও বেশি সচেতনা থাকা দরকার।

(‌এটি ওপেন ফোরামের লেখা। মতামত লেখকের ব্যক্তিগত। এই নিয়ে আপনিও আপনার মতামত তুলে ধরতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com) ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *